চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

জেগে উঠুক গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর

ডাকসু নির্বাচন

রাত পোহালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। একই সাথে হবে সবগুলো হল সংসদের নির্বাচনও। প্রায় ৪৩ হাজার ভোটার সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ডাকসুতে ২৫টি এবং হল সংসদের ১৩টি পদে পছন্দের প্রার্থী বাছাই করবেন। এরই মধ্যে এ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দীর্ঘ ২৮ বছরেরও বেশি সময় পর হতে যাওয়া এ নির্বাচন এরই মধ্যে নানা দিক থেকে আলোচনার শীর্ষে। বিশেষ করে ব্যাপক সংখ্যক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এতে। যাদের মধ্যে ডাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন ২২৯ জন প্রার্থী। অংশগ্রহণে পিছিয়ে নেই হল সংসদগুলোও। ১৮টি হলের প্রতিটিতে ১৩টি করে পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৫০৯ জন।

এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অতীত অভিজ্ঞতায় অনেকেই নির্বাচন হওয়া না হওয়ার বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। না হওয়ার পক্ষের পাল্লাই ছিল ভারি। তাদের কাছে যুক্তিও ছিল। কেননা আগের বছরগুলোতে ডাকসু নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কোনো না কোনো কারণে তা ভন্ডুল করে দেওয়া হয়েছে। আর তার দায় নিতে হয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে।

তবে এবার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই মাসের একটু বেশি সময় পর হতে যাচ্ছে এ নির্বাচন। আর সেই নির্বাচন আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিজয়ই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্বাস। এর প্রতিফলনও দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রসংগঠনগুলোর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে। নিজেদের মতো করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও করেছে তারা। এই নির্বাচন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রদল  দীর্ঘ ৯ বছর পর ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু মধুর ক্যান্টিনে বসতে পেরেছে।

মোট কথা, ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার গণতন্ত্র চর্চার সেই হারানো সুনাম আর ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে নানা বিষয়ে মত ভিন্নতা থাকলেও তাদের মধ্যে সহাবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। আরেকটি বড় বিষয় হলো, ক্যাম্পাসে সবগুলো ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতেও কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেয়নি। মারামারি-হানাহানি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এসবই প্রমাণ করে সুন্দর পরিবেশের এ নির্বাচন সবারই দীর্ঘ বছরের প্রত্যাশা, স্বপ্ন।

আমরা জানি, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছরই যাত্রা শুরু করেছিল ডাকসু। তারপর থেকে এই অঞ্চলে নেতা তৈরির সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে নিজেকে। তার প্রমাণ ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান এবং সর্বপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীন দেশেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাকসুর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।

আমরা মনেকরি সোমবারের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিহাসে নিজেদের স্থান করে নেবেন। দেশ ও জাতির গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ডাকসুকে জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখবেন।