জুন মাসে শিশু নির্যাতনের হার গত এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু জুনেই ৪৬২ জন কন্যাশিশু বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করা হয়েছে ২০৭টি। বাল্যবিয়ের সংখ্যা মে মাসে ছিল ১৭০টি এবং বন্ধ করা হয়েছিল ২৩৩টি।
রোববার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ চিত্র তুলে ধরেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুধু বাল্যবিয়ে নয়, এই সময়কালের মধ্যে মোট ২ হাজার ৮৯৬ জন শিশু বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মে মাসে নির্যাতনের এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৭১ জন। ৪৮ শতাংশ শিশু অর্থাৎ ১ হাজার ৩৭৬ টি শিশু নতুনভাবে নির্যাতিত হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে শতকরা ৬১ ভাগ শিশু।
দেশের ৫৩টি জেলায় মোট ১২ হাজার ৭৪০ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৩৩২ জন নারী ও শিশু এর আগে কখনোই সহিংসতার শিকার হয়নি। মে মাসে নির্যাতনের শিকার এই সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪৯৪ জন। নারী ও শিশুর উপর মোট নির্যাতনের হার মে মাসের তুলনায় কমলেও, শিশু নির্যাতনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
জুনে ৫৩টি জেলার মোট ৫৭ হাজার ৭০৪ নারী ও শিশুর সাথে কথা বলা হয়েছে। এরমধ্যে ১২ হাজার ৭৪০ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। নারীর সংখ্যা ৯ হাজার ৮৪৪ জন আর শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৬ জন। শিশুদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ১ হাজার ৬৭৭ জন অর্থাৎ শতকরা ৫৮ ভাগ, আর ছেলেদের সংখ্যা ১ হাজার ২১৯ জন অর্থাৎ শতকরা ৪২ ভাগ।
শিশুদের মধ্যে অনেক বেশি সংখ্যক শিশু এই জুনেই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বাল্যবিয়ে বাড়ার অন্যতম কারণ হলো স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ করোনা বিষয়ক ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তেমনভাবে নজর দিতে পারছে না। এছাড়া করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, অভাব, পাড়া-প্রতিবেশির প্রভাবে অভিভাবকরা আইন লঙ্ঘন করে কন্যাশিশুদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন খুব গোপনে।
এমজেএফ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাল্যবিয়ের চেয়েও অনেক বেশি শিশু অর্থাৎ ১৭৬৪ জন শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৯২ শিশু। ধর্ষণ করা হয়েছে ৯ জনকে এবং ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৯৯টি শিশুকে যাদের মধ্যে ৮৬ জন মেয়ে। হত্যা করা হয়েছে ৪১ জনকে, অপহৃত হয়েছে ১০ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে আরো ১২ জন।
মোট আক্রান্ত নারীদের মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৬ জন বা ২০ শতাংশ। প্রতিবারের মত এবারও নারীদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ নারী অর্থাৎ ৯ হাজার ৬৯৩ জন পারিবারিক সহিংসতার শিকার। এই পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৬২২ জন, অর্থনৈতিক নির্যাতন ৩ হাজার ৯ জন, শারীরিক ১ হাজার ৮৩৯ এবং যৌন নির্যাতন ২২৩ জন, যৌন হয়রানি ৯৭, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৩৫ জনকে, হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে এবং ত্রাণ আনতে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫ জন।
সহিংসতার শিকার শিশু ও নারীদের এমজেএফ তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কাউন্সেলিং, ফলোআপ, সেবা প্রদানকারী সংস্থা, স্থানীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ সহয়তা, চিকিৎসা ও আইনগত সহায়তা প্রদান করেছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সরকারের উচিৎ স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বিশেষ সার্কুলার দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে বন্ধ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া। স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বাল্যবিয়ে নিরোধ কমিটিকে কার্যকর করে তুলতে হবে।