জাতীয় বাজেট ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা চেয়েছিলাম এবারের বাজেট মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় কমাতে না পারলেও যেন বাড়িয়ে না দেয়। দেশের শিল্পখাত, কৃষিখাতসহ বিভিন্ন খাতের উৎপাদন ব্যয় যাতে বেড়ে না যায়। দুটোর একটিও এ বাজেটে রক্ষিত হয়নি। যারা বেআইনিভাবে টাকা ইনকাম করেছে, তাদেরকে ধরার জন্য কোন উদ্যোগ নেই। আগামী বছর জীবন যাত্রার ব্যয় এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েই গেল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিপিডির কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এই প্রতিক্রিয়ার আয়োজন করা হয়। আগামীকাল ২ জুন সকাল ১১টায় একই স্থানে বাজেটের বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানান সিপিডি কর্মকর্তারা। এসময় সিপিডির অন্যান্য কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন আইনের আঙ্গিকে বাজেটের অনুমিত বিষয়গুলো স্পষ্ট করায় অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, যে অনুমানগুলো তিনি (অর্থমন্ত্রী) ওখানে বলেছেন তার অন্তত তিন চারটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যেমন- উনি (অর্থমন্ত্রী) মনে করছেন রেমিটেন্স আয় বিগত বছরগুলোর মতো ভাল থাকবে, এর মধ্যে রেমিটেন্স আয় যে কমে যাচ্ছে সে বিষয়টি সেখানে বিবেচনায় আসেনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় অনুযোগ এবং আমরা বার বার বলেছি যে প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু একমাত্র বিষয় নয়। অনুমানের ভিতরে অবশ্যই আমাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি আনতে হবে। কত পরিমাণ মানুষ এই বাজারে ঢুকছে সেটা উনি (অর্থমন্ত্রী) এক জায়গায় বলেছেন কিন্তু তার অনুমানের ভিত্তি কি, কত বেকারত্ব কমনে বা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এই ধারণাওটিও ওখানে থাকা দরকার ছিলো। এত উচ্চ প্রবৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আশানুরুপ পরিস্থিতি নেই।
তিনি বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে বলে এসেছি যে বাজেটের আর্থিক কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে।কারণ বাজেটের সাথে প্রায়ই এমন সব প্রাক্কলন করা হয় যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল থাকে না। এবারও আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন, মোট সরকারি ব্যয় মোট ২৬ শতাংশ বাড়বে। অর্থাৎ সরকারের ব্যয় চারভাগের এক ভাগ বেড়ে যাবে আগামী এক বছরে। অথচ গত চার-পাঁচ বছরের হিসেব নিলে দেখা যাবে এই খাতে ১৪-১৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়নি। এই বৃদ্ধির বাস্তবায়ন পরিকল্পনাও বাজেটে সুনির্দিষ্টভাবে দেখতে পারিনি। বড় ধরনের খরচের প্রাক্কলন করলেন কিন্তু বিষয়টি হল সেটি বাস্তবসম্মত, সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনা এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থার সাথে করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যে মূহূর্তে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি হতে যাচ্ছে, সেই মূহূর্তে তারা একটি পরিসংখ্যানের ফাঁদে পড়ে গেছেন। অর্থাৎ এ জন্য ওনাদের অর্থায়ন সমাবেশ করতে হবে। অর্থায়ন সমাবেশে অর্থের উৎস সম্পর্কে বলা আমরা উদাহরণ হিসেবে বলছি এখন বলা হচ্ছে করের পরিমাণ বাড়বে ৩৪ শতাংশ। এক বছরে তিন ভাগের এক ভাগ করের পরিমাণ বৃদ্ধি করা এতটা সহজ ব্যাপার নয়। এ জন্য যে ধরনের পরিকল্পনা, কাঠামোগত পরিবর্তন, নীতি সংস্কার এবং অন্যান্য সক্ষমতার দরকার তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, তারপরেও যখন মেলানো যায়নি তখন বৈদেশিক সাহায্যকে ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এক বছরের মধ্যে দ্বিগুন হয়ে যাবে বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার। সাড়ে সাত বিলিয়নকে ব্যবহার করা হবে। যেখানে আমরা দুই-তিন বিলিয়নকে ব্যবহার করতে পারিনা।এই বৈপ্লবিক বৃদ্ধির ভিত্তি আমাদের কাছে বোধগম্য না।
প্রস্তাবিত বাজেট থেকে সংশোধিত বাজেটে কম হয়, আবার সংশোধিত বাজেট থেকে বাস্তবে আরও কম হয়, তার মানে এই ৩৪ শতাংশ বা ৯৩ শতাংশ বেড়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আমাদের পক্ষে বলা অনেক কঠিন। যেই ধরনের প্রক্রিয়া বা প্রবণতা দেখছি তাতে মনে হয় ভৌত কাঠামোতে আমরা যে পরিমাণ অর্থায়ন করছি, সামাজিক অবকাঠামোতে সে পরিমাণ যাচ্ছে না।
সামাজিক খাতের ভিতরে এবং ভৌত খাতের ভিতরে অর্থায়নের ক্ষেত্রে একটি দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে এই বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। মাথা পিছু ব্যয় কমে যাচ্ছে অনেকক্ষেত্রে। কিভাবে মাথাপিছু ব্যয় কমে যাচ্ছে।