জীবন তো একটাই সেখানে সব কিছু নিয়ে এত সিরিয়াস হওয়ার কি আছে? সবকিছুই বরং স্পোর্টিংলি নাও। একটু হালকা হও দেখবে জীবনটাই অনেক সহজ হয়ে উঠছে। এমন বার্তাই ‘স্পোর্টিংলি নাও’ বইটির মধ্যে দিয়ে সবাইকে দিতে চেয়েছেন লেখক প্রভাষ আমিন। যদিও বইটি মূলত খেলাধূলা নিয়েই।
খেলার মধ্যে দিয়ে জীবনের কথা কথাই আবার উঠে এসেছে বইটির ভূমিকাতে। যেখানে বলা হয়েছে-জীবন শুধু যাপনের নয়, উদযাপনের।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথোপকথনের সময় বইটির নানান দিক, লেখক হিসেবে নিজের নানান দিক তুলে ধরলেন পেশায় সাংবাদিক প্রভাষ আমিন। ‘বইটির মধ্যে দিয়ে আমি কিছু বার্তা দিতে চেয়েছি পাঠককে।’ জীবনটাকে একটু অন্যভাবে দেখার, একটু ভিন্নভাবে বোঝার তাগাদা রয়েছে বইটির মধ্যে। লেখকের মতে, প্রত্যেকটি মানুষকে জীবনে কোথায় থামতে হবে সেটা জানতে হয়। কুমারা সাঙ্গাকারা যে টুর্নামেন্টের পর রিটায়ার করলো সেইখানেও সে চারটি সেঞ্চুরি করেছিলো। অনেকেই বলেছিলো তার আরো অন্তত দুই বছর খেলা উচিত। কিন্তু সেটা করতে গেলে হয়তো তার পারফর্মেন্স খারাপ হয়ে যেতো। এরপর কি আর তার সেই গ্রহণযোগ্যতাটা থাকতো? সেই বার্তাই আমি পাঠককে দিতে চেয়েছি বইটির মাধ্যমে।
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বইটি প্রভাষ আমিনের ছয় নাম্বার বই। প্রত্যেকটি বই-ই লেখকের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবুও লেখকের কাছে প্রশ্ন, সবচেয়ে পছন্দের বই। জবাব দিলেন, গতবারের বইমেলার অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘প্রসূনদের জন্য ভালোবাসা’ বইটি। আমি মূলত রাজনীতি নিয়ে লিখি। কিন্তু এই বইটিতে রাজনীতির কোনো কথাই আসেনি। বরং উঠে এসেছে আমার ছেলের সমবয়সীদের জীবনের নানান দিক।
রাজনীতি নিয়ে লিখেন কিন্তু খেলাধূলা বিষয়ক লেখা নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। বলেন, একটা বিষয়ের সঙ্গে অনেক দিন থাকার পর সেই বিষয় নিয়ে আগ্রহ কমে যায়। কিন্তু খেলাধূলা নিয়ে আমার আগ্রহ কখনো কমেনি। বরং সবসময় সেই একই পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে আমি খেলা নিয়ে লিখেছি। আর নিজের বই নিয়ে তো কারো আগ্রহের কমতি থাকে না। প্রতিটি বই প্রকাশের অনুভূতিই প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতির মতো। তবে এবারের বইটি অনেক কষ্ট করে হলেও প্রকাশের দিনই রাত এগারোটায় হাতে পেয়েছি, তারপর সেটা দেখেছি তাই এবারের বইটি নিয়েও আগ্রহ প্রচুর। একজন খুব কষ্ট করে বাসায় নিচে পৌঁছে দিয়ে এসেছে, সেটার অনুভূতিও অন্যরকম ছিলো।
পেশায় সাংবাদিক এই লেখক, বেশিরভাগ সময়ই রাজনীতি এবং খেলাধূলা নিয়ে লেখেন। তবে প্রায়শই সবাই বলেন তার লেখার মধ্যে উপন্যাসের টান থাকে। সেটাকেই কাজে লাগাতে চান লেখক-সাংবাদিক প্রভাষ আমিন। বলেন, ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় আমি মাঠে অংশ নিয়েছি। সেই সময়টাকেই কোনো একসময় আমার লেখায় তুলে আনতে চাই। কোনো এক লেখার মধ্যে দিয়ে। মানে উপন্যাসের মোড়কে পাঠককে জানাতে চাই ইতিহাস।
একজন লেখক হিসেবে সবাই চাইবেন যেন পাঠক তার বইটি পড়ে। তেমনটাই চাওয়া এই লেখকেরও। বলেন, আমি কখনো এমন কাউকে বই উপহার দিইনা যিনি কিনা বইটি নিয়ে পড়বেন না বরং ঘরে সাজিয়ে রাখবেন। যিনি পড়বেন তাকেই বই দিতে চাই। পাঠকের কাছে আমার একটাই চাওয়া বই কিনে পড়বেন, ঘরে সাজিয়ে রাখবেন না। ২৪ ঘণ্টাকে আমরা খাওয়া-দাওয়া, চাকরি/ব্যবসা, ফেসবুক ও ইন্টারনেট দিয়ে ভাগ করলে বই পড়ার সময় মোটেও মিলবে না আধুনিক প্রজন্মের। কিন্তু বই পড়ার যে আনন্দ তা আর কোনো কিছুতেই নাই। এটা কেবল যে বই পড়ে সেই টের পাবে।
তবে আমাদের দেশের সাহিত্যকে দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে আমাদের অনুবাদের উপরও জোড় দিতে হবে। রুশ অনেক সাহিত্য আমরা পড়তে পেরেছি কারণ তার অনুবাদ ছিলো। গীতাঞ্জলি নোবেল পেয়েছিলো অনুবাদ হয়েছিলো বলেই। অনুবাদে হয়তো মূল লেখার রস পাওয়া যাবে না কিন্তু খানিকটাতো মিলবে। পাওয়া যাবে লেখাটির জীবনাদর্শও।
প্রভাষ আমিনের লেখা ‘স্পোর্টিংলি নাও’ বইটি প্রকাশ করেছে আদর্শ। গতকাল ৫ জানুয়ারি থেকে বইটি পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ৫৭৫ ও ৫৭৬ নাম্বার স্টলে। বইটির মূল্য ধরা হয়েছে ২০০ টাকা।