সৌদিতে অবস্থানরত প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান জিহাদের পক্ষে ঈমাম মাহাদীর সৈনিক হিসাবে বিভিন্ন বক্তব্যের অডিও শুনে তার ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে হিজরতের চেষ্টা করেছেন ১৭ জন কর্মী। তারা প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন।
সোমবার রাতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের বিপরীত পাশে পাবলিক হেলথ কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ১৯টি মুঠোফোন ফোন, ২ লক্ষ ৩৪ হাজার বাংলাদেশী টাকা ও ৯২২ আমেরিকান ডলার জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. হায়দার আলী, মো. মাহমুদুল হাসান ওরফে মাসুম, মো. জামিরুল ইসলাম, মো. বিল্লাল হোসেন, মো. শেখ আরাফাত ওরফে জনি, মো. ইমরুল হাসান ওরফে ইমন, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. মোজাম্মেল হক, মো শাহজালাল, মো. আক্তারুজ্জামান, মো. মাহমুদুল হাসান ওরফে সাব্বির, মো. আবিদ উল মাহমুদ ওরফে আবিদ, মো. সোহাইল সরদার, মো. ওবায়দুল ইসলাম ওরফে সুমন, মাহমুদ হাসান ওরফে শরীফ, মো. মাজেদুল ইসলাম ওরফে মুকুল ও মো. সোহাগ হাসান।
মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমে ই-মেইল বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগ।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) তহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তাররা জনৈক প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের বিভিন্ন বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঈমাম মাহদীর সৈনিক হিসাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন।
‘প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমান ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে সৌদি আরব যান এবং সেখানে বর্তমানে অবস্থান করছেন। তিনি গাজওয়াতুল হিন্দ নামক স্থানে মুসলিমদের পক্ষে জিহাদ করার আহব্বান জানিয়ে অডিও ভিডিও প্রকাশ করেন।’
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তাররা পলাতক সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় তারা পরস্পর যোগাযোগ করে হিজরতের সিদ্ধান্ত নেন।
তাবলিগ-জামায়াতের আড়ালে সাতক্ষীরা বা বেনাপল সীমান্ত দিয়ে তারা ভারত-কাশ্মীর সীমান্ত হয়ে সৌদি আরব পৌঁছাবে। তাদেরকে বলা হয়েছিলো করোনার দুর্যোগে আকাশ থেকে একধরনের গজব নেমে আসবে এবং সমস্ত কিছু ধোঁয়াছন্ন হয়ে যাবে তখন সীমান্তে কোন পাহারা থাকবেনা এই সময় তারা যেন চলে আসেন।
এই বিশ্বাস নিয়ে গত ১৮ মার্চ তারা প্রথমে সাতক্ষীরা ও পরে যশোর সীমান্তের কাছে বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান করেন ভারতে যাওয়ার জন্য। তাদেরকে আরও জানানো হয়েছিলো আগামী চল্লিশ দিন সূর্য উঠবে না, আকাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যাবে, কাফিররা সবাই মারা যাবে, ঈমানদারদের শুধু হালকা কাঁশি হবে, ঈমাম মাহাদির আগমন এই রমজানে সমাগত তাই তারা যেভাবে পারে সেভাবে যেন আসার চেষ্টা করে। তারা সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্ত দিয়ে পার হতে না পেরে ঢাকা হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সে মোতাবেক তারা ঢাকায় আসেন।’
এডিসি তোহিদ বলেন, সৈয়দ মোস্তাক বিন আরমানের প্ররোচনায় এবং তার সাথে যোগাযোগ করে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ ছাত্র গত জানুয়ারি মাসে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে গমন করে আর ফিরে আসেননি।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় সা’দ, কাউসার, শরীফ, তোফাজ্জল, গিয়াসউদ্দিন, আলী আজম এবং রাশেদ নামে আরও ৭ জন ঈমাম মাহাদির সৈনিক হিসেবে যোগদানের উদ্দ্যেশে সৌদিআরব হিজরত করেছেন বলে গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানান।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে।