চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন নিয়ে নাটকীয়তা যেন আর থামছে না। একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। নির্বাচন কমিশনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন দিলুর কাছে গত রোববার বিকালে অসামঞ্জস্য ফলাফল ও কারচুপির অভিযোগ এনে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের আবেদন করেন সভাপতি পদপ্রার্থী ওমর সানি। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার আপিল বোর্ডের সদস্যরা নির্বাচনের ভোট আবারও গণনা করেন। সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে এ ভোট গণনার কাজ।
গতকাল সোমবার বিকালে আপিল বোর্ডের সদস্য খোরশেদ আলম খসরু জানান, এই গণনায় ওমর সানির পাওয়া ভোটের সঙ্গে আরও ৯টি ভোট যোগ হয়েছে। এর ফলে নির্বাচনে তার প্রাপ্ত ১৫৩ ভোট থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২ ভোট। কিন্তু তাতে ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়বে না।
আজ মঙ্গলবার সকালে আবারও ভোট গণনা করা হয়। এবার জানা গেল, কার্যনির্বাহী পরিষদে এর আগে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় সুশান্তকে। তখন জানানো হয়, তিনি পেয়েছেন ৩৪২ ভোট। আজ আবার গণনার পর জানা গেছে, আসলে সুশান্ত পেয়েছেন ২২৫ ভোট। এবার বিজয়ী হয়েছেন নানা শাহ। তিনি পেয়েছেন ২৫২ ভোট।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এফডিসির চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এখানে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন দিলু বলেন, ‘গণনায় ভুল হয়েছে। এর জন্য আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খোরশেদ আলম খসরু, নিবার্চন কমিশনের চেয়ারম্যান মনতাজুর রহমান আকবরসহ নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও আপিল বোর্ডের সদস্যরা। আরও উপস্থিত ছিলেন ওমর সানি, মৌসুমী ও সুশান্ত।
ওমর সানির প্রতিদ্বন্দ্বি মিশা সওদাগর পেয়েছেন ২৫৯ ভোট। তিনি পরবর্তী ২ বছরের জন্য চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদ খান। তিনি পেয়েছেন ২৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অমিত হাসান পেয়েছেন ১৪৫ ভোট।
এবার সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রিয়াজ (৩২৮) ও নাদের খান (২৬৫), সহসাধারণ সম্পাদক আরমান (২৬৫), সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত (৩১০), আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ইমন (২৬২), দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর (২৯৫), সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন (১৯০) এবং কোষাধ্যক্ষ কমল (২৪২)।
কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা হলেন অঞ্জনা (৩২২), আলীরাজ (৩০৩), জেসমিন (৩২৩), নাসরিন (২৬৮), পপি (৩০২), পূর্ণিমা (২৮২), ফেরদৌস (২৬১), মৌসুমী (৩৪৯), রোজিনা (৩৪৪), নানা শাহ (২৫২) ও সাইমন সাদিক (৩৬১)।
গত শনিবার সকালে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার মনতাজুর রহমান আকবর। এ সময় তিনি জানান, এই কমিটি আগামী ২ বছর দায়িত্ব পালন করবে। এবার ২১টি পদের বিপরীতে ৫৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন। মোট ভোটার ছিলেন ৬২৪ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫৫৮ জন। গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৫টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়।
এবার নির্বাচনে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে। প্যানেল তিনটি হলো ওমর সানি-অমিত হাসান, মিশা সওদাগর-জায়েদ খান এবং ড্যানি সিডাক-ইলিয়াস কোবরা। এর মধ্যে ওমর সানি–অমিত হাসান প্যানেল থেকে জয়লাভ করেছেন সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক জাকির হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ পদে কমল আর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে জেসমিন, ফেরদৌস, মৌসুমী ও সুশান্ত। ড্যানি সিডাক-ইলিয়াস কোবরা প্যানেল থেকে শুধুমাত্র কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে জয়লাভ করেছেন নাসরিন। বাকি সবকটি পদেই জয়লাভ করেছেন মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল থেকে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। এবার ১৪তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।