কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নূরু এবং রাশেদ খানকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার ঘটনায় শাহবাগ থানা পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিকেল ৪টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, শাহবাগ থানায় তাদের আধঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং জিডি লেখানোর পরও বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জিডি গ্রহণ করা যাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এই সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর, রাশেদ খাঁন এবং ফারুক হোসেন। সেসময় সেখানে অনেক শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে নুরুল হক নূরু এবং রাশেদ খানকে পিস্তল দেখিয়ে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে ছাত্রলীগ নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে শাহবাগ থানায় জিডি করতে গেলে জিডি নেয়া হয়নি বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছিলেন নুরুল হক নূর।
বুধবার দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে তা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী ব্রিফিংয়ে নুরুল হক নূর জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলে তার রুমে (১১৯) পিস্তল নিয়ে রুমে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পি। তার সাথে ছিলেন মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম লিমন। এসময় তাদের হত্যার হুমকি দেয় তারা।
নূর আরও জানান, সরাসরি মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাপ্পি বলেন, ‘এই আন্দোলন করছিস তোরা সরকারের বিরুদ্ধে। তোদের একটাকেও ছাড়া হবে না। প্রজ্ঞাপনটা জারি হলে তোদের কুত্তার মতো পিটানো হবে। কুকুরের মতো গুলি করে রাস্তায় মারা হবে। তোরা তো কেউ বাঁচবি না। বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। শেষবারের মতো মা-বাবার দোয়া নিয়ে নিস। শুধু প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। দেখিস, তোদের কী অবস্থা করি।’
এই সময় মেহেদী হাসান সানী ও ফাহিম লিমন তাদের ওপর হামলা করার জন্য বারবার সামনে আসে। কিন্তু অন্যরা তাদের নিবৃত্ত করেন বলে জানান তিনি।
সরকারের উদ্দেশে নূর বলেন, বাংলার ছাত্র সমাজকে দুর্বল ভাববেন না। তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করুন। যেকোন ষড়যন্ত্র হলে ছাত্রসমাজ তা প্রতিহত করবে।
আন্দোলনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, আমাদের তারা বাবা মায়ের কাছে থেকে দোয়া নিতে বলে। দুই দিনের মধ্যে আমাদের হত্যার হুমকি দেয়। আমরা প্রাণনাশের শঙ্কায় আছি। আমরা পুলিশি প্রটেকশন চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ বুলবুল বাপ্পী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ও আমার পাশের রুমে থাকে। আমার এক ছোট ভাইয়ের আইডি হ্যাক করে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিত। পরে তার সাথে এই বিষয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। আমি তাকে বলেছি, আন্দোলন করছিস ঠিক আছে। অন্য কোনো ঝামেলায় জড়াবি না। পিস্তল দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন এটা তাদের সাজানো নাটক।’
মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়েছিলাম যাতে আমার হলে কোন ঝামেলা না হয়। বাপ্পী ভাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়েছে এটা সত্য। তবে পিস্তল দেখানোর বিষয়টা ভিত্তিহীন।’
ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্রীড়া সাংবাদিক শেখ আশিক বলেন, তারা প্রথমে মোবাইলে হুমকি দেয় এবং পরবর্তীতে দলবল নিয়ে আসে। আমি তাদদের প্রতিহতত করার চেষ্টা করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসানকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি লাইন কেটে দেন।