উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে টানা আন্দোলনের কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেট সদস্য সচিব রহিমা কানিজ এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর উপাচার্যপন্থী ছাত্রদের মিছিল থেকে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় একনেক। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য এ বছরের ১ মে ছয়টি হলের দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। এই দরপত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।
এরপর দুর্নীতির অভিযোগে তিন দফা দাবিতে গত ২৩ আগস্ট থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। কয়েকদিন আন্দোলন চলার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই আলোচনায় আন্দোলনকারীদের দুটি দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে প্রকল্পের টাকা নিয়ে দুর্নীতির তদন্তের দাবি না মানায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে নামেন আন্দোলকারীরা।
সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করতে গেলে উপাচার্যপন্থী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন বলে জানা গেছে। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু আন্দেলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ না মানার হুমকি দিয়ে ক্যাম্পাস ও হলে অবস্থান করার ঘোষণা দেন।
এছাড়া আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও দুই সদস্য আজ পদত্যাগ করেছেন।
আমরা মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে কোনো সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব নয়। উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে এনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুতই অচলাবস্থার নিরসন করবে। অন্যথায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত ক্লাশ ও পরীক্ষা বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা অনাকাঙ্ক্ষিত সেশনজটে পড়ে নিজেদের মূল্যবান সময় হারাবেন। আমরা আশা করি সব ধরণের অস্থিতিশীল অবস্থার অবসান ঘটবে এবং দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।