জাসদ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের সীমা নেই। জাসদ নিয়ে ফেসবুক পোস্টে সাবেক ছাত্রনেতা চৌধুরী জহিরুল ইসলাম ছড়ায় ছড়ায় বলেছেন: আর কত ভাঙ্গবি তুই/ ভাঙ্গা ঘরের দেয়াল!/একদিন না মাথায় ভাঙ্গে/খুঁটি বিহীন চাল!
তিনি লিখেছেন, অনেকের মতো আমারও জাসদ নিয়ে কৌতূহলের সীমা নেই। জাসদ সম্পর্কে অনেক কৌতুহলের উত্তর দিয়েছেন একদা দলটির নেতা মহিউদ্দিন আহমদ তার বিখ্যাত ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ বই-এ।
বইয়ের মুখবন্ধে মহিউদ্দিন আহমদ যে কথা লিখেছেন তাও উল্লেখ করেছেন একসময় দেশে সাংবাদিকতা করে এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চৌধুরী জহির। ওই মুখবন্ধে আছে: ‘সত্য গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর- মার্ক টোয়েনের এই বিখ্যাত উক্তিটি বাংলাদেশের রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই প্রাসঙ্গিক। এই ভূখণ্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রধান মাইল ফলক মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধ দেশের মানুষকে বদলে দিয়েছে আমূল, নড়বড়ে করে দিয়েছে এ অঞ্চলের সামাজিক বুনন ও রাজনীতির চালচিত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে দিয়েছে রাজনীতির ব্যাকরণ। বলা চলে, একরকম শূন্যতার মধ্যেই জন্ম নিয়েছে প্রতিবাদের অন্য এক ধরনের প্রবণতা, যার সংগঠিত রূপ হচ্ছে জাসদ নামের একটি রাজনৈতিক দল।’
চৌধুরী জহির ফেসবুক পোস্টে আরো লিখেন: আজ অনলাইন সংবাদের শিরোনাম- ‘ইনুর জাসদে ভাঙ্গন’। জাসদ নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন, দলটি ফসিলে পরিণত হওয়ার আগেই! আমাদের বন্ধু বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ ছিলেন একসময় জাসদ ছাত্রলীগের বুদ্ধিজীবী। আমাদের সময় এক বরেণ্য শিক্ষক, তৎকালীন গণকন্ঠের সম্পাদক প্রফেসর আফতাব আহমেদও আর নেই। নেই জলিল, আরেফ, শাহজাহান সিরাজ। হয়তো আরো অনেকে। জাসদ একটি ঝড়ের নাম, কিন্তু সে ঝড়টি কেন হাওয়ার বেগে এসে আবার হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সে বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা প্রয়োজন। কারণ জাসদ ছিল প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও সেনাপ্রধানের দল বিএনপি’র বাইরে এ দেশীয় মাটি থেকে উদগত একটি রাজনৈতিক দল। দলটির অসাম্প্রদায়িক পরিচয় ছিল, কিন্তু তথাকথিত রুশ-মার্কিন-ভারতের বিরোধিতা করতে যেয়ে রাজনীতির স্রোত থেকে হয়েছে বিচ্ছিন্ন।
দলের ভাঙন নিয়ে বলতে গিয়ে চৌধুরী জহিরুল ইসলাম আরো লিখেন: জাসদ যতোবারই সম্মেলনের মুখোমুখি হয়েছে, ততোবারই ভেঙ্গে টুকরো-টুকরো হয়েছে। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনে তাদের বরাবরের অনীহা! ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাসদের আত্মপ্রকাশ। কিছুদিন পর ১৯৭৩ সালের ৪ জানুয়ারি আওয়ামী সেচ্ছাসেবক বাহিনী জাসদের সমাবেশে হামলা চালিয়ে শরীফ নুরুল আম্বিয়ার হাত ভেঙ্গে দেয়, মাথা ফাটিয়ে দেয় আফম মাহবুবুল হকের। অতি সাম্প্রতিক ভাঙ্গনে শরীফ নুরুল আম্বিয়া দিচ্ছেন একাংশের নেতৃত্ব। আবার অপর অংশের নেতৃত্বে ফের ইনু? জাসদ একটি ‘ভাঙ্গনের দল’। সভাপতি উত্তরে চললে সাধারণ সম্পাদক চলেন দক্ষিণে। প্রতি সম্মেলনের মতো এবারও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলো। ইনু উত্তরে তো আম্বিয়া দক্ষিণে। একদা জলিল দক্ষিণে, তো আ স ম রব উত্তরে, আবার রব উত্তরে তো শাহজাহান সিরাজ দক্ষিণে। এবং এই উত্তর-দক্ষিণ উভয় দিকেই অনুসারীর ঘাটতি নেই!
‘কিন্তু এবারের সম্মেলনে বক্তৃতায় এক হাস্যকর উক্তি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম। সমাবেশ দেখে তিনি বলেছেন- জানতাম না যে জাসদ এখনো এত শক্তিশালী। তার মানে তার ধারণা ছিলো- সরকারে যোগ দেয়ায় জাসদের লোটা কম্বল সবকিছুই বিক্রি হয়ে গেছে! এদিকে কর্নেল তাহেরের ভ্রাতা জাবি’র বিতর্কিত ভিসি আনোয়ার হোসেন বলেছেন- সামনের বছর জুনে অবসরে যাওয়ার পর তিনি আবার জাসদে যোগ দেবেন! তবে তার কাছে একটি বিনীত নিবেদন, তিনি যেনো জাসদ নিয়ে একটি গবেষণা করে তবেই যোগ দেন। তা নাহলে অবসর জীবনটাই হবে পণ্ডশ্রম। গবেষণার বিষয় হতে পারে- “জাসদ কেন ভাঙ্গে?’
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাবেক সাংবাদিক ফেসবুক পোষ্টে আধুনিক তরুণদের রাজনীতিতে আগ্রহী করার বিষয়ে বলতে গিয়ে লিখেন: আরেকটি বিষয়ে যে কেউ গবেষণা করতে পারেন, তা হলো তরুণ-ছাত্রদের মধ্যে জাসদের জনপ্রিয়তা আদৌ আছে কি? জাসদের জন্মলগ্নে শতকরা ৮৫ জনের বয়স ছিল ৩৫ এর নীচে। শতকরা ৪৩ জন ছিলেন বয়স ২৫ এর নীচে। ১৯৭৩ এর নির্বাচনে বহু জাসদ প্রার্থী তাদের বয়স বাড়িয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। মাত্র ২ শতাংশ প্রার্থীর বয়স ছিল ৪০ এর বেশি! আওয়ামী লীগের বাইরে একমাত্র জাসদই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল! (সূত্র: জাসদের উত্থান পতনঃ অস্থির সময়ের রাজনীতি)
‘পরিশেষে, নিজের থেকে একটি প্রশ্ন করতে চাই- জাসদের বর্তমান নেতা-কর্মীরা আদৌ দলের ঘোষণাপত্র, ইশতেহার, গঠনতন্ত্র পড়েন কি-না? এক সময় পড়াশুনা না করেই রাজনীতি করা যেতো। কিন্তু তরুণ প্রজন্মকে টানতে হলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জাসদ নেতৃত্বকে সব প্রশ্ন মোকাবেলা করতে হবে। নিজে কখনো কবিতা লিখি না, দুঃসাহস হয় না বলে। কিন্তু আজ জাসদের পুনরায় ভাঙ্গন দেখে একটি ছড়ার ছন্দ খুঁজে পেলাম-
আর কত ভাঙ্গবি তুই
ভাঙ্গা ঘরের দেয়াল!
একদিন না মাথায় ভাঙ্গে
খুঁটি বিহীন চাল!’