গত ১ বছরে সহস্রাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জার্মানির বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়ে ভিসার জন্য অপেক্ষমান রয়েছে।
প্রায় ১বছর অপেক্ষায় থাকার পরও বাংলাদেশস্থ জার্মান দূতাবাস থেকে মিলছে না ইন্টারভিউর তারিখ।
ভিসার দাবিতে অনলাইন প্রতিবাদের আওতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে #speedupstudentvisa ক্যাম্পেইন। গতকাল বিকাল থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে ইতোমধ্যে ১৪ হাজারের বেশি টুইট করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় টুইটের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেন্ড এর অধীনে ক্যাম্পেইনটি প্রথম স্থান দখল করেছে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. নাজিম উদ্দীন জানান: আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম একেবারেই সীমিত হয়ে যাওয়ায় সহস্রাধিক আলোকিত সম্ভাবনাময়ী শিক্ষার্থীর জার্মানিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ট্যাকনিকাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন এর শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম জানান: ইতোমধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই ব্লক একাউন্টের ১১ লাখ টাকা জমা রেখেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে অনেকেই কয়েক লক্ষাধিক টাকা টিউশন ফিও জমা দিয়েছে। তাই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ভিসা সাক্ষাৎকার ও ভিসা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় থাকলেও এম্বাসির হঠাৎ ধীরগতি শিক্ষার্থীদের বেশ উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
টুইটারে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন: বেশীরভাগ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন, এম্বাসিতে পূর্বে যে লোকবল সংকট ছিল সেটিও এখন নেই, এছাড়া সাবেক এম্বাসেডর মি. পিটার নতুন টিম গঠন করে শিক্ষার্থী ভিসাকে ফোকাস করবেন বলে জানালেও এখনো কেন বিলম্ব হচ্ছে সে বিষয় পরিষ্কার করার জন্য বর্তমান এম্বাসেডরকে উদ্দেশ্য করে টুইট করছেন এবং দ্রুত শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে কাজ করার অনুরোধ করছেন।
জার্মানিতে গত ৩ সেমিস্টার অনলাইন ভিত্তিক পাঠ্যক্রম পরিচালিত হলেও আগামী সেমিস্টার থেকে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এমতাবস্থায় নিয়মিত বাংলাদেশস্থ জার্মান দূতাবাসের কার্যক্রম পরিচালিত না হলে যথাসময়ে ভিসা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
ফলাফল স্বরুপ বিশ্বাবিদ্যালয় প্রশাসন হতে শিক্ষর্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়বে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ও ক্যারিয়ার। আশাহত হবে সহস্র পরিবার, ভেঙে পড়বে শিক্ষার্থীদের মনোবল, দেশ হারাবে সম্ভাবনাময়ী গবেষকদের।
জার্মানিতে শিক্ষা ব্যবস্থা থিওরি, প্র্যাকটিক্যাল ও ইন্টার্নশিপের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে থিওরি ক্লাস অনলাইনে পরিচালিত হলেও প্র্যাকটিক্যাল এবং ওয়ার্কশপ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানে স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে ইন্টার্নশিপে অংশগ্রহণ করতে হয়। তাই, শুধুমাত্র থিওরি ক্লাসে অংশগ্রহণ করে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ একেবারেই ক্ষীণ। তাই শিক্ষার্থীগণের বেশিরভাগ বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা সম্ভব হচ্ছে না।
লাইব্রেরিতে প্রবেশ করার সুযোগ না থাকায় রিসার্চ ভিত্তিক অধ্যয়ন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থায় শুধুমাত্র ভিসা জটিলতার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময়ী এ মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পর ভিসা সংক্রান্ত স্বাক্ষাৎকার পাওয়ার বিষয়ে ক্রমাগত অনিশ্চয়তা এবং বিলম্বের কারনে শিক্ষার্থীরা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক অভিভাবকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
নাজিম আরও জানান: আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি, আমরা আমাদের পরিস্থিতি নিয়মিত জানাচ্ছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও জার্মান কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। তবে দ্রুতই যথাযথ ফলাফল না আসলে অনেক শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও অনশনের মতো পরিস্থতিতে চলে যেতে পারে।