জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। হাতাহাতির ঘটনার দ্বিতীয় দিনে আজ দু’ পক্ষই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বাস্তাবায়ন করেছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন।
অন্যদিকে শরীফ এনামুল কবিরপন্থী শিক্ষকরা দ্বিতীয় দিনের মতো দুপুর পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন।
অবরোধ কর্মসূচি শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা মানববন্ধনসহ দিন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৬ কর্মদিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তবে ক্লাস-পরীক্ষা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা প্রত্যাখ্যান করে ছয় দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মুখপাত্র সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ নবগঠিত প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, তাদের দলের শিক্ষকদের উপর ‘হামলাকারী’ শিক্ষকদের শাস্তি এবং হাতাহাতির ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। তিনি জানান, আগামী বৃহস্পতি, রবি এবং সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাংবাদিক সংগঠনের সাথে গণসংযোগ ও মতবিনিময় কর্মসূচি পালন করা হবে।
অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ তাদের পরবর্তী কর্মসূচির কথা জানিয়ে বলেন, কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন, বুধবার সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হবে। এই পাঁচ দিনের মধ্যে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার, প্রক্টরিয়ার বডির অপসারণ, ঘটনা তদন্তে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন না করা হলে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তীর কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করছেন। উপাচার্য সেখানে তাদের ধর্মঘটের মূল কারণ কি জানতে চেয়ে নিজেই উত্তর দেন। তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, তাদের আন্দোলন প্রভোস্টদের কেন অব্যাহতি দেয়া হল। এজন্য উপাচার্য স্বৈরাচারী, নিজ ইচ্ছায় নিয়োগ দেন আবার অব্যাহতিও দেন।
এসময় তিনি পিছনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ২০১৪ সালেও এমন অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তখন বর্তমানের আন্দোলনকারীরাতো সেটাকে অবৈধ বলেনি। কারণ তারা তখন ক্ষমতায় বসেছিল।
তিনি আরও বলেন ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে প্রভোস্টরা আমার সাথে ফুল দিলেন না। ফুল দিলেন তাদের দলের সাথে, নিজ নিজ হলের সাথে, এবং এল্যামনাইয়ের সাথেও ফুল দিয়েছেন। তারা উপাচার্যের সাথে যেতে লজ্জা পেলেন, এগুলো অবাধ্যতা। নিয়ম-কানুন মানার জন্যই অ্যাক্ট তৈরি করা হয়েছে। তারা বারংবার আমার বিপরীতে দাঁড়াচ্ছেন। তারা কি আমার লোক? সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন হলে কি হত? বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
প্রসঙ্গত, প্রথম মেয়াদের দায়িত্ব শেষ করার পর অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের দ্বিতীয় মেয়াদে পুনঃনিয়োগ পাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই উপাচার্য ফারজানা ইসলামের প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন শরীফ এনামুল কবিরপন্থি শিক্ষকরা।
তারই ধারাবাহিকতায় প্রশাসনিক রদবদলকে কেন্দ্র মঙ্গলবার অবরোধ কর্মসূচির পালন করেন উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা। সেই কর্মসূচি পালন করতে মঙ্গলবার ভোরে পরিবহন ডিপোতে তালা লাগানোকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দু’পক্ষের শিক্ষকরা।