অনেক সময় খবরের পেছনে থাকে খবরের অন্তরাল বা পটভূমি। পেছনের সেই ঘটনা কখনও হতে পারে বিচিত্র ও চমকপ্রদ।
সংবাদপত্র বা টেলিভিশনে সম্পাদিত যে খবর আমরা প্রতিদিন দেখতে পাই সেগুলো সংগ্রহ করতে গিয়ে একজন সাংবাদিককে অনেক সময় বিরল অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। সেই সব অভিজ্ঞতার বর্ণনা খবরের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে।
সাংবাদিকতার দীর্ঘ ঝুলি জান্নাতুল বাকেয়া কেকা তুলে ধরেছেন তার এই বইতে।
পেশাগত কারণে ঘুরেছেন ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ। সেসব অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেছেন পাঠকের জন্য। কখনও সুখের, কখনও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে সংবাদ সংগ্রহের জন্য। বইটিতে ভিনদেশে টেলিভিশন সাংবাদিকতার নানাদিক, এয়ারপোর্টে ঘটে যাওয়া মজার সব ঘটনা, ক্যামেরা ও পাসপোর্ট হারানোর বিড়ম্বনা সহ ঐ সব দেশের অনেক অজানা তথ্য আছে।
যারা এসব জায়গায় যান নি, তাদের কাছে ছবির মত মনে হতে পারে। আবার ভবিষ্যতে যারা এসব জায়গায় যাবেন তাদের জন্য এই বই হতে পারে নির্দেশনা। বইয়ে আছে ছোট ছোট ঐতিহাসিক ঘটনাও। যখন যে জায়গার বিবরণ দেয়া হয়েছে তখন সেখানে যুক্ত করা হয়েছে সেই জায়গার ঐতিহাসিক কিছু গল্প।
জান্নাতুল বাকেয়া কেকা একজন টেলিভিশন সাংবাদিক। ক্যামেরার পেছনে সামনে দুই জায়গাতেই কাজ তার। খবর সংগ্রহ করতে হয়, তা তৈরি করতে হয়, তারপর উপস্থাপন করতে হয় পাঠকের জন্য, দর্শকদের জন্য। অনেক প্রতিকূলতায় এ কাজ করতে হয় বিদেশ বিভুঁইয়ে।
বইটি ভ্রমণের চিরায়ত সৌখিন ছন্দের আবহে লেখা নয়। বরং ভিনদেশে একজন টেলিভিশন সাংবাদিকের কাজের ক্ষেত্র, ব্যাপ্তি, বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি আর সেখান থেকে উতরে যাওয়ার কৌশল উঠে এসেছে। সুন্দর সাবলীল ঝরঝরে বর্ণনায়।
দেশে যে কাজ দুই তিন জনে মিলে করতে হয় বা করা হয়-বিভুঁইয়ে তা একক দায়িত্বে করতে হয়েছে। দুই দেশের সময়ের পার্থক্যের সাথে তাল মিলিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা একজন টিভি সাংবাদিকের জন্য কেমন তা তিনি তুলে ধরেছেন।
বিদেশ গেলও কাজের মধ্যে থেকেছেন। ঘোরার সুযোগ পেয়েছেন কম।
ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মান, ইতালি, ভ্যাটিকান সিটি, আমেরিকা, কানাডা আর প্রতিবেশী ভুটানসহ ঘুরেছেন বিভিন্ন দেশ। এ সব জায়গায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ করেছেন।
জান্নাতুল বাকেয়া কেকা’র জন্ম রাজশাহীতে। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন জেলাও। নানান জেলা শহরের স্কুলে লেখাপড়া তাকে নগর যান্ত্রিকতা ও জীবনবোধে তাড়িত করে লেখালেখি ও ভ্রমণে উদ্বুদ্ধ করেছে। ঢাকায় দুই দশক সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘ জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিল (ইউএনএফপিএ), ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সেরা পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।
জান্নাতুল বাকেয়া কেকা একজন কবিও। তার লেখা ‘ফ্রকের ঘেরে শৈশব’ কাব্যগ্রন্থটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এছাড়া গবেষণাগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধুর ভাবনায় নারী উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ এবং ‘বাংলাদেশের করোনাকাল: সাংবাদিকের চোখে’ পাঠকনন্দিত হয়েছে।