তিনদিন আগে বৃহস্পতিবার ভোররাতে রাজধানীর দিলু রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে আরও দুইজনের সাথে ঘটনাস্থলেই পুড়ে মারা যায় চার বছরের ছোট্ট শিশু রুশদি। সেদিন ভয়ংকরভাবে পুড়ে যায় শিশুটির মা জান্নাতুল ফেরদৌসের (জান্নাত) শরীরের ৯৫ ভাগ অংশ।
সেই পোড়া শরীরে তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করে রোববার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জান্নাত। এমন মৃত্যুর আগে নিজের একমাত্র সন্তান যে বেঁচে নেই; সেই খবরও জেনে যেতে পারেননি তিনি।
যদিও যতবার তার জ্ঞান ফিরেছে শরীরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়েই আইসিইউতে স্বজনদের বলেছেন, অন্তত একটি বার প্রিয় সন্তান রুশদিকে যেন দেখতে দেওয়া হয়। স্বজনরা কোথায় পাবে রুশদিকে? মায়ের আগেই যে সে না ফেরার দেশে চলে গেছে।
জান্নাতের ননদ শেখ রেশমা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘সে (জান্নাত) বারবার বলছিল, ‘‘রুশদি কই তাকে নিয়ে আসো। আমি একবার ওকে দেখতে চাই।’’
‘‘তাকে সান্ত্বনা দিতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বলতে হয়েছে, রুশদি ভালো আছে। তুমি আইসিইউতে। তাই এখানে ওকে আনা যাবে না।’’
কিন্তু অবুঝ মায়ের মন সেই সান্ত্বনায় স্থির থাকতে পারেনি। তাই তো বারবার বলেছেন, ‘‘তাহলে আমাকেই নিয়ে যাও রুশদির কাছে।’’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেখ রেশমা বললেন, ‘‘বিধাতা ঠিকই জান্নাতের কথা রাখলেন। ওর মৃত্যু হলো আজ। প্রিয় সন্তানের পাশেই দাফন করা হয়েছে ওকে।’’
সেদিনের আগুনে রুশদির বাবা শহীদুল কিরমানীও দগ্ধ হয়ে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
দুই চোখের অশ্রু মুছে রেশমা আরও বলেন, ‘আমার ভাবির ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। তিনি একেবারেই চলে গেলেন সন্তানের কাছে।’
জান্নাতুল ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) এ চাকরি করতেন। হাসপাতালে যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহ কর্মস্থলে নেয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে নরসিংদীর মনোহরদীতে নেয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে তার সন্তান রুশদির পাশেই তাকে দাফন করা হয় তাকে।
চিকিৎসকরা বলছেন, শহীদুলের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোডের একটি পাঁচতলা ভবনের গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জান্নাতুলের চার বছরের সন্তান রুশদিসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।