টেলিফোন এবং ইমেইলে বারবার যোগাযোগ করেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি টাইমস হায়ার এডুকেশন। এ কারণে তাদের করা এশিয়ার সেরা ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো জায়গা হয়নি।
চ্যানেল আই অনলাইনের এক ইমেইলের উত্তরে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর ফিল বেটি জানান, ২০১৯ সালের র্যাংকিং এর জন্য গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আগের বছরের মতো তথ্য জমা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।
‘আমাদের টিম বারবার তাদের সঙ্গে ইমেইল এবং টেলিফোনে যোগাযোগ করে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য জানায়নি। এ কারণে সম্প্রতি প্রকাশিত ২০১৯ সালের র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি,’ বলে ফিল বেটি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি টাইমস হায়ার এডুকেশন ২০১৯ সালের এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এমনকি নেপাল-শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না থাকায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে টাইমস হায়ার এডুকেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এশিয়ার ৪০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না থাকার আসল কারণ জানতে পেরেছে চ্যানেল আই অনলাইন। তাদের পাঠানো ইমেইলে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথ্য পাঠানোর অনুরোধে সাড়া না দেওয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
এবার ঢাবি কর্তৃপক্ষ সাড়া না দিলেও টাইমস হায়ার এডুকেশনের এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর আগের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার যে কথা বলেছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৮ সালের র্যাংকিংয়ে।
ওই র্যাংকিং অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের অবস্থান ছিল ১০০০+ এবং এশিয়ার মধ্যে ৩০১ থেকে ৩৫০ এর মধ্যে। একইভাবে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩০১ থেকে ৩৫০ এর মধ্যে ছিল।
তবে, এবার তথ্য না দেওয়ার কারণে র্যাংকিংয়ে জায়গা না পাবার বিষয়টি অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাকচ করে দিয়েছে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নাই’ উল্লেখ করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে কিন্তু আমরা কোনো উত্তর দেইনি, এটি সঠিক নয়। আমরা সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে একটি ইমেইল পেয়েছি, আমরা সে বিষয়ে আমাদের একজন ডিনকে দায়িত্ব দিয়েছি তাদেরকে সমুদয় তথ্য দেয়ার জন্য। এটি খুব অল্প কিছুদিন আগের ঘটনা।
টাইমস হায়ার এডুকেশনের দাবি করা ইমেইল-টেলিফোনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন: আমরা ২৫ এপ্রিল তাদের ইমেইল পাই, কিন্তু ২৬ এপ্রিল অর্থাৎ পরদিনই তারা টেলিকনফারেন্স করতে চায়। এতো অল্প সময়ের মধ্যে সেটা সম্ভব ছিল না বলে তা হয়নি।
স্বচ্ছ কোনো গবেষণায় কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানকে তথ্য না দেওয়ার কোনো কারণ নেই বলেও মন্তব্য করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
তবে, টাইমস হায়ার এডুকেশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা সময়মতোই যোগাযোগ করেছিল। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় তথ্য দিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেটা দেয়নি। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগে র্যাংকিংয়ে ছিল, কিন্তু এখন কেনো নেই সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।
এরকম র্যাংকিং বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মানকে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডে নিয়ে যেতে হবে।
‘আমাদের ছেলেমেয়েদের মান অনেক ভালো। তারা অল্প সুযোগে তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। সেখানে ভালোও করছে। আর তাই বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাসিলিটি দিতে হবে। ‘
র্যাংকিং এবং অর্থবাণিজ্য
টাইমস হায়ার এডুকেশনের মতো র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না থাকা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে অর্থ লেনদেনের মতো একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে।
কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়: লন্ডনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিং পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে ৪৫ হাজার ডলার না দেওয়ার কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় আসেনি।
টাইমস হায়ার এডুকেশনের এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর ফিল বেটির কাছে র্যাংকিং এর সঙ্গে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি একে ‘পুরোপুরি মিথ্যা এবং মানহানিকর’ বলে মন্তব্য করেন।
তবে, শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম পরে উল্লেখ করেন, ওইসব গণমাধ্যম তাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করেছে।
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন: কোনো পত্রিকায় নয়, একটা ইফতার অনুষ্ঠানে বললাম AACSB accreditation করার অভিজ্ঞতা এবং খরচের কথা, খবরে আসলো অন্য নাম আর তারপর ….
যেভাবে র্যাংকিং এর জন্য তথ্য সংগ্রহ
টাইমস হায়ার এডুকেশন জানিয়েছে, র্যাংকিং এর জন্য কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য জমা দেয়। তথ্য বিশ্লেষণে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি সব দিক দিয়ে যোগ্য হয় তাহলে র্যাংকিংয়ে অন্তুর্ভুক্ত হয়।
‘পুরো বিষয়টাই আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থেকে মুক্ত,’ বলে জানান ফিল বেটি।
তিনি জানান: র্যাংকিংয়ে অংশগ্রহণ টাকা-পয়সার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং তথ্যের জন্য অনুরোধ জানানো হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্ব-উদ্যোগী হয়ে তা জমা দিতে হয়। গত বছর ৮৬টি দেশের ১,২৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে র্যাংকিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে এবং টাইমস হায়ার এডুকেশনের র্যাংকিং সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারগুলোর কাছে বিশ্বাসযোগ্য।
টাইমস হায়ার এডুকেশনের তথ্য সংগ্রহ এবং বিচার-বিশ্লেষণ যে শুধু তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এমন নয়। তাদের গবেষণাটি অডিট করে বিশ্বের অন্যতম সেরা অডিট সংস্থা প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্স।
আগামী বছরের র্যাংকিংয়ে থাকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়?
ফিল বেটি জানান, টাইমস হায়ার এডুকেশনের ২০২০ সালের র্যাংকিং প্রক্রিয়ায় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিচ্ছে।
তবে, ওই র্যাংকিং-এও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থাকছে কিনা এটা নিয়ে সংশয় আছে। এবার যে র্যাংকিং প্রকাশ করা হয়েছে তার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত। আগামী বছরের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ। কিন্তু, এখনও তাদের তথ্য জানায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।