জাসদ ছেড়ে বাসদে এলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। অতঃপর বাসদেও থাকতে পারলেন না, বাসদ বিভক্ত হলো। মান্না ঠাঁই করে নিলেন বাসদ (মাহবুব)এ। আ ফ ম মাহবুবুল হক শত চেষ্টা করেও তাকে বাসদেও (মাহবুব) রাখতে পারলেন না তিনি চলে গেলেন আওয়ামী লীগে। হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।
অতঃপর আওয়ামী লীগেও থাকতে পারলেন না। ছিটকে পড়ে গেলেন দূরে। গঠন করলেন নাগরিক ঐক্য। বারবার নিজের মত ও পথ বদল করা ব্যক্তিটি এবার এলেন জাতীয় ঐক্যের সমাবেশে। ড.কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী হিসাবে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনও করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগে না থাকতে পেরে দূরে ছিটকে গেলেন তিনি। আরও আরও ছিটকে পড়াদের জড়ো করে তিনি গঠন করলেন গণফোরাম। গণফোরাম সম্পৃক্ত হল ১১ দলে। পরবর্তীতে ১১ দলেও থাকতে পারলেন না তিনি। বদরুদ্দোজা চৌধুরী চিকিৎসক হতে জিয়ার ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি ছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব।
বিএনপির দলীয় মনোনয়নে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আসম আব্দুর রব ছিলেন আওয়ামী ছাত্রলীগের নেতা। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন ও করেছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পরে আওয়ামী ছাত্রলীগ বাদ দিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলে যোগ দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদে। পরবর্তীতে হয়ে যান স্বৈরাচার এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ঐক্যমতের সরকারে যোগ দিয়ে তিনি হয়ে যান মন্ত্রী। জাসদ ইনু ও জাসদ রব একীভূত হল। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার বিভক্তি।
নৌকা, লাঙ্গল, ধানের শীষ সব সাপের একই বিষ বলা বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্তর্ভূক্ত সংগঠন গণ সংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকী এই তিন সাপের এক সাপের সাথে এক মঞ্চে উঠে গেল। জোনায়েদ সাকির এই ভূমিকার ব্যাপারে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কী বক্তব্য? বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন বামফ্রন্টের সমন্বয়ক দীলিপ বড়ুয়া তার চীন সফরের সঙ্গী হয়ে যান। তখন বামফ্রন্ট বৈঠক ডেকে দিলীপ বড়ুয়াকে ভৎর্সনা করেছিল ও বামফ্রন্টের সমন্বয়কের দায়িত্ব হতে তাকে সরিয়ে দিযেছিল।
জোনায়েদ সাকীর এই ভূমিকাকে কিভাবে দেখছে বাম গণতান্ত্রিক জোট? জোনায়েদ সাকি গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন পাড় হয়ে পরবর্তীতে গড়ে তুলেন গণ সংহতি আন্দোলন৷ বহু পথ বদল করা এসব নেতৃত্বের দেশব্যাপী সাংগঠনিক অবস্থান কি? ড.কামাল হোসেন, অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আসম আব্দুল রব,মাহমুদুর রহমান মান্না ও জোনায়েদ সাকি কি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের জামানত রক্ষা করতে পারবেন? এমন নেতৃত্বের অধীনে এক মঞ্চে উঠা রাজনীতিতে পথ খুঁজতে থাকা বিএনপির দৈন্যতাই কি দৃশ্যমান হলোনা?
বরাবর মানুষ দেখে আসছে ছোট দলগুলোকে বড় দলের সাথে জোট বাঁধতে৷ নির্বাচনে জেতার জন্য বড় দলের মার্কাও নিয়ে নেয় তারা। যেমন ১৪ দলে নৌকা ও ২০ দলে ধানের শীর্ষ কিন্তু এবার ঘটলো উল্টো। বড় দল গিয়ে মিশলো ছোট দলের সাথে৷ জাতীয় ঐক্যের শ্লোগান দিয়ে যুক্ত ফ্রন্ট কি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চলেছে? তারা কি ভিন্নভিন্ন মার্কাতেই নির্বাচনে যাচ্ছে? নাকি ১৪ দলের মতো একক মার্কা নেবে। ১৪ দলের মার্কা নৌকা আর যুক্তফ্রন্টের মার্কা কি ধানের শীষ হতে চলেছে? এ ব্যাপারে ড.কামাল, আসম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তব্য দৃশ্যমান হোক।
অবশ্য কেউ কেউ বলছে এটা জাতীয় ঐক্যের নামে মূলত আওয়ামী লীগ বিরোধী ঐক্য। তারা নির্বাচন বানচাল করে মূলত আরেকটি ওয়ান ইলেভেনকেই স্বাগত জানাতে চাচ্ছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে নির্বাচন বর্জন করে তারা বিশ্ববাসীকে বুঝাতে চায় যে জাতীয় ঐক্যের বিপরীতে তারা একতরফা নির্বাচন দিতে চাচ্ছে।
বিগত ২০০৬ এর ওয়ান ইলেভেন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার পথ করে দেয়৷ সে সময় ওয়ান ইলেভেন না এলে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে ফেলতো। সেবারের ওয়ান ইলেভেন কে ড.কামাল আল্লাহর রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন৷ এবারের আল্লাহর রহমতটাকে কি তিনি বিএনপি জামাতের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন?
জাতীয় ঐক্যের নেতারা এ ঐক্যকে বলছে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির ঐক্য। তাই এ জোটে জামায়াতের ঠাঁই নেই। কিন্তু জামায়াত কি ২০ দলীয় ব্যানারে সমাবেশে যোগ দেয়নি? তারা কি বিএনপি কে বলেছে জামায়াতকে ২০ দলীয় জোট হতে বাদ দিতে হবে? সুতরাং জাতীয় ঐক্য জামাতবিহীন তা ঠিক নয়। আসলে এ ঐক্যকে বলা যায় আওয়ামী লীগ বিরোধী ঐক্য কিংবা ১৪ দল বিরোধী ঐক্য। ২০ দল গত ভাবে ১৪ দলকে মোকাবেলা করা যাচ্ছেনা তাই জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি। কামাল-বদরুদ্দোজা-রব-মান্না-সাকী গংদের এই মিশন।
ওয়ান ইলেভেনের কুশিলব ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনকেও দেখা গেছে এই মঞ্চে। বিএনপির নির্বাচন বর্জন আর জাতীয় ঐক্যের নির্বাচন বর্জন দুটোর মূল্যায়ন এক হবেনা। এর শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনী বৈতরনি পাড় হয়ে আসার মতো কারও সামর্থ নেই।
তবে তাদের চমক সৃষ্টিতে মুগ্ধ হতে হয় যে ছোট দল হয়েও যে তারা বড় দলকে তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত করতে পেরেছেন বিএনপির রাজনৈতিক অযোগ্যতাতেই তারা এই চমক সৃষ্টি করতে পেরেছেন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)