লন্ডনে পার্সিয়ান বিভাগের কর্মীদের ইরানে থাকা পরিবারের প্রতি হুমকি-ধামকি বন্ধে জাতিসংঘের কাছে এক নজিরবিহীন আবেদন জানাতে যাচ্ছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসির দাবি, ইরান এক ভয়ঙ্কর পদ্ধতি চালু করেছে। হুমকি, আত্মীয়দের গ্রেপ্তার ও ইরানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার ঘটনাও ঘটছে ওই কর্মীদের সঙ্গে।
২০০৯ সালের ইরানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর থেকেই দেশটির টার্গেটের মুখে পড়ে বিবিসির পার্সিয়ান সার্ভিস। নির্বাচনের পরে লাখ লাখ ইরানি রাস্তায় নেমে আসে ভোট চুরি হওয়ার অভিযোগে। প্রায় মাসব্যাপি চলে বিক্ষোভ।
ওই সময় কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমা সরকারগুলোর দিকে আঙ্গুল তোলে। তেহরান দাবি করে বিদেশি শক্তি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে।
জেনেভায় হতে যাওয়া জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার সভায় আপিলের বিষয়টি তুলবে বিবিসি।
গত বছরের অক্টোবরে বিবিসির পার্সিয়ান সাংবাদিকরা একটি শোকসভায় অংশ নেয়, যে ব্যক্তিকে তাদের বেশিরভাগ মানুষই চিনতেন না। তারা সেখানে তাদের সেই সহকর্মীকে সমবেদনা জানাতে গেছিলো, যার বাবা ইরানে মৃত্যুবরণ করেছে।
এক সপ্তাহ আগে সেই কর্মীকে ফোনে জানানো হয় যে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সাধারণভাবে সেই সময়েই ওই সাংবাদিকের প্লেনে উঠে যাওয়ার কথা এবং বাবার কাছে চলে যাওয়ার কথা।
কিন্তু বিবিসির পার্সিয়ান কর্মীরা গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে আর ইরানে যেতে পারেনি। তাই নিজের অসুস্থ বাবার সঙ্গেও স্কাইপির মাধ্যমে যোগাযোগ করেই সাধ মেটান এই কর্মী। এক সপ্তাহ পর তারা বাবা মারা যান। এমনকি বাবার সৎকারের সময়ও পাশে থাকতে পারেননি তিনি।
বিবিসির পার্সিয়ান কর্মীদের জন্য এসব সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে অন্তত ৩০ কর্মী তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছেন এবং বিগত এক দশকে যাদের ‘বিদায়’ বলারও সুযোগ পাননি।
বিবিসির আরেক পার্সিয়ান সাংবাদিকের কাছে স্কাইপের মাধ্যমে এই সংস্থায় কাজ না করার কথা বলা হয়। তবেই তার ২৭ বছর বয়সী বোনকে ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। ওই সংবাদকর্মীর বোনকে তেহরানে তার বাবার বাড়ি থেকে এক রাতের তল্লাশীর সময় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরেক সংবাদ উপস্থাপিকাকে হুমকি দেওয়া হয় এই বলে যে, তার ১০ বছর বয়সী সন্তান কোন স্কুলে পড়ে তারা সেটা জানে।
ইরান তাদের ১৫২ জন সাম্প্রতিক ও সাবেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তোলে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করা হয়। এমনকি এসব সাংবাদকর্মীদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেস বিবিসি কর্মী, তাদের পরিবার এবং মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সব ধরনের লিগ্যাল অ্যাকশন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবিসি পার্সিয়ানের প্রধান রোজিতা লতিফ বলেন, এখন আরো বেশি বেশি মানুষ বিবিসি পার্সিয়ান দেখছেন। কারণ তারা ইরানি সংবাদমাধ্যম থেকে তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য ও নিরপেক্ষ খবর ও বিশ্লেষণ পাচ্ছে না।