চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জাতির ক্রান্তিকালে সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানকে রক্ষা করেছে: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জাতির ক্রান্তিকালে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সুপ্রিমকোর্ট তার উপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানকে রক্ষা করেছে।

‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস-২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন তিনি ।

সেসময় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সুপ্রিমকোর্ট মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বল্প সময়ে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। শান্তি ও সঙ্কটে সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষক হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

‘‘আমি কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি সেইসব অকুতোভয় বিচারপতিদের যারা বন্দুকের নলের কাছে নতি স্বীকার করেননি। তাদের বিবেককে কখনো বিকিয়ে দেননি। এছাড়া বিজ্ঞ আইনজীবীদের ভূমিকাও আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তবে বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয়।’’

তিনি বলেন ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দেশে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সংবিধানকে নানাভাবে কাঁটাছেড়া করে গণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যা করার অপচেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে।’

‘‘সংবিধান বিরোধী ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট ষড়যন্ত্রকারীদের সেই নীল নকশা বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করে সুপ্রিম কোর্ট তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছে।’’

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘দেশের সকল আদালতের কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে বিচার কার্যক্রমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সুপ্রিমকোর্ট যেহেতু কোর্ট অব রেকর্ড সেহেতু এর সকল নথিকে ডিজিটাল নথিতে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের স্থাপনার ছবি সম্বলিত স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন করেন।

‘নারীরা এখনো ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত’
সুপ্রিম কোর্ট জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আয়োজিত আজকের অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘ন্যয়বভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই সংবিধানের মূল লক্ষ্য। তবে অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও নারীরা এখনো ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে । তাদের আইনের আশ্রয় লাভের ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো রয়েছে সেই বাধা দূর করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসবেন বলে আশা করছি। একইভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে।’

‘‘সুপ্রিমকোর্ট সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে জনগণের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে, ব্যাপকভিত্তিতে জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয় সংবিধানের যে কোন বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করে এবং একাধিক মাইলফলক রায় দিয়ে সংবিধানবহির্ভূত কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে উচ্চ আদালত। এছাড়া জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলা এবং পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয়ে মাইলফলক রায় প্রদান করেছে।’’

‘একজন বিচারক নিশ্চিতভাবেই বিচারকর্মের জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে পুরস্কৃত হবেন’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘বিচারকের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন বিচারক নিশ্চিতভাবেই বিচারকর্মের জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে পুরস্কৃত হবেন। আর দেশের জনগণও তাদেরকে একটি বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। বিচারক একজন মানুষ এবং তিনি সকল মানুষের বিচার করেন। সর্বকালে ও সর্বদেশে বিচারকদের জ্ঞান কর্মদক্ষতা, সততা ও ব্যক্তিগত আচরণ বিষয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনেক উচুঁমানের। যে কোন একজন মানুষের প্রত্যাশা এই যে, একজন বিচারক হবেন আইনের জ্ঞানে প্রাজ্ঞ, আদালতের কাজে সময়ানুবর্তী ও নিয়মনিষ্ঠ, প্রশ্নাতীতভাবে ও সকলক্ষেত্রে সৎ, মানবিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সকলের সাথে মর্যাদাপূর্ণ ও পরিশীলিত আচরণের একজন আদর্শ মানুষ।’

‘‘এটা কেবল বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা নয়, সকল দেশের মানুষই এরকম গুণাবলীর মানুষকে বিচারক হিসেবে প্রত্যাশা করে। জনমানুষের এই সংগত ও যৌক্তিক প্রত্যাশা পূরণে যত্নবান হতে হবে। বিচারকদের মনে রাখতে হবে যে, একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। এটা হলো বিচারকদের সততা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি গণমানুষের অবিচল বিশ্বাস। সাধারণ মানুষের এই আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে উচুঁ নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। তেমনি অন্যদিকে সদাবিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’’

‘বিচারপতিগণ নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারছেন’
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিচার বিভাগ এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচারপতিগণ নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারছেন। তবে এই পথ সবসময়ের জন্য মসৃণ ছিল তা নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচার রুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র বিকাশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকবে। বিচার বিভাগ আধুনিকায়নের ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে সরকার ই-জুডিশিয়ারি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আশা করছি এই বিচার বিভাগে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং সুপ্রিম কোর্ট দিবস উদযাপন উপলক্ষে গঠিত জাজেস কমিটির সভাপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ।