দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময়ের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে কার্যকর করার পর তাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে একই সাথে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয় কারাসূত্রে জানা যায়।
রাত সাড়ে ১২টার দিকেই চারটি এ্যাম্বুলেন্স কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে। এরমধ্যে দুইটি এ্যাম্বুলেন্স মুজাহিদের লাশ নিয়ে ফরিদপুরে যাবে এবং অপর দুইটি সাকা চৌধুরীর লাশ নিয়ে চট্টগ্রামের রাউজানে যাওয়ার কথা রয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী এই দুই শীর্ষ নেতার সর্বোচ্চ দণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে ইতিহাসের কলঙ্ক মোচনের পথে আরো কিছুটা অগ্রসর হলো বাংলাদেশ।
ফাঁসির মঞ্চ ও জল্লাদের প্রস্তুতি, রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা প্রার্থনা নাকচ এবং সবধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার ফলে রাতের মধ্যেই চট্টগ্রামের ত্রাস সাকা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যায় দায়ী মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হবে ধারণা করা হচ্ছিল। রাত দশটার পরে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মারুফ হাসানের বক্তব্যে ফাঁসির বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।
রাত নয়টার দিকে সাকা চৌধুরীর স্ত্রী, দুই ছেলে, মেয়েসহ প্রায় ত্রিশ জনের বেশি স্বজন তার সাথে শেষ দেখা করতে কারাগারের ভেতরে যান। পরে দীর্ঘ প্রায় দুই ঘন্টার সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে সাকার পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী তার বাবা প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেননি বলে জানান।
ছেলে আলী আহমেদ মাবরুরসহ মুজাহিদের স্বজনদের প্রায় ২৫ জন সদস্য কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। রাত সোয়া বারটার দিকে বেরিয়ে এসে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয় নিয়ে মাবরুরও একই দাবি করেন।
এর আগে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে করা সাকা-মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন দুটি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে পাঠিয়ে দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এর কিছুক্ষণ পরই বঙ্গভবনে যান আইন সচিব।
সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া এ দুই নেতা প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কিনা সেই বিষয়ে জানতে দুই ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারের ভেতরে যান। প্রথমে তারা মৌখিক ভাবে দুইজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রাণভিক্ষার কথা জানান। পরে প্রাণভিক্ষার আবেদনের দুটি ফর্ম নিয়ে পূরণ করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেন বলে নিশ্চিত করেন কারা কর্তৃপক্ষ।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এই দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় বাড়ানো হয় নিরাপত্তা।
শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে এমনকি এই এলাকায় যান চলাচলও সীমিত করে দেওয়া হয়। আশেপাশের দোকানপাটও বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেখানে অবস্থান নেন অন্যান্য থানার অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মীরা। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়।