দীর্ঘ ২২ বছর ধরে অচল রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন নির্বাচন (জাকসু)। এতে জাতি যেমন বঞ্চিত হচ্ছে যোগ্য নেতৃত্ব থেকে; তেমনি শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে।
জাকসু না থাকায় ক্যাম্পাসে মন্থর হয়ে পড়েছে ছাত্র নেতৃত্ব। তবে জাকসু অচল থাকলেও সচল রয়েছে আয়ের খাত। ২২ বছর ধরে জাকসুর সব কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতিবছর ভর্তি ও পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের চাঁদা হিসেবে ৩০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
এই অর্থ কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯২ সালে। সে বছর ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার পর থেকে জাকসু নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় এর সব কার্যক্রম।
সেই থেকে দীর্ঘ ২২ বছরেও নির্বাচন না হওয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে জাকসু ভবন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৯ বার। জাকসু না থাকায় এ ভবনটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্যতাও এখন আর নেই।
১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৯ (২) ধারা অনুযায়ী ভিসি প্যানেল নির্বাচনে জাকসু থেকে পাচঁজন নির্বাচিত প্রতিনিধির ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার রয়েছে। জাকসু সচল না থাকায় ভিসি প্যানেল নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বও থাকছে না।
প্রশাসনের অবহেলা ও উদ্যোগের অভাবে জাকসু ভবনের অবস্থাও এখন ভয়াবহ। বিভিন্নস্থানে ভেঙে পড়েছে এর অবকাঠামো। তালাবদ্ধ কক্ষে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান আসবাবপত্র।
জাকসুর আয়-ব্যয়ের খাতের সর্ম্পকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার একজন কর্মচারী জানান, জাকসুর নামে খোলা ব্যাংক হিসাব নম্বরে বর্তমানে কোনো টাকা জমা নেই। অথচ প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শাখায় প্রায় ছয় লাখ টাকার মতো জমা হয়।
এছাড়াও জাকসু বাবদ প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে যে অর্থবরাদ্দ দেওয়া হয় তারও কোনো হদিস নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বিপুল পরিমাণ অর্থ যায় ক্যাম্পাসের ক্ষমতাসীন নেতাদের পকেটে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, জাকসু নির্বাচন বন্ধ হওয়ায় ছাত্র নেতৃত্বও বিকশিত হতে পারছে না।
সাধারণ শিক্ষার্থীরদের দাবি, অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে। সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নেতা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর জাকসু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তার পদত্যাগের পর ওই উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়।