জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশসহ অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশগুলো রয়েছে বড় ধরণের বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে। উন্নতি ও প্রযুক্তির বিপ্লবের কালে পৃথিবীর প্রাকৃতিক বিপদ বেড়েছে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের নানাবিধ উপকরণ।
নির্বিচারে গাছ কাটা, অপচনযোগ্য বস্তু ব্যবহার করা, পাহাড় ও জলাভূমি ধ্বংস করে বসতি গড়াসহ কলকারখানার বর্জ্য শোধনে আইন না মানা ইত্যাদি কারণে মানুষ নিজেই এই পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনছে। সম্প্রতি জতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ভেতর বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি শিশু মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। এর ভেতর অধিকাংশই জীবিকার কারণে শহরে এসে অমানবিক জীবন যাপন করে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে করা ইউনিসেফ’র প্রতিবেদনে বলা হয়: দেশের ২০টি জেলা জলবায়ু ঝুঁকিতে আছে। সামুদ্রিক ঝড়, বন্যা, আকস্মিক বন্যা, খরার মতো জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হতে পারে এসব জেলা। এর মধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বেশি।
ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো- ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, ফরিদুপর, বাগেরহাট, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নীলফামারী, গাইবান্ধা, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ। এসব জেলার শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উপকূলীয় এসব জেলার দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে বলে আমরা মনে করি।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে: নদীভাঙন ও বন্যার কারণে শিশু ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজ বাড়ি-স্কুল ছেড়ে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেক শিশু এবং তরুণ বিশেষ করে যাদের তেমন দক্ষতা নেই, তারা কম বেতনে হলেও বেঁচে থাকার জন্য বিপজ্জনক ও শোষণমূলক কাজে নিযুক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয় বা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে।
শিশুদের এই চিত্র আমাদের উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশ এমনিতেও বহু আগে থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আসছে। নতুন করে যোগ হয়েছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা শিশুরাও। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে এই দেশ শিশুদের বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। আমরা আশা করি সরকারও এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।