চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে কংগ্রেসের অবস্থান কী?

৩৭০ ধারার অধীনে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবসানের জন্য বিজেপি সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টি।

তবে এর পক্ষে-বিপক্ষে দলের অভ্যন্তরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মাঝে অনেক মতবিরোধ হয়েছে বলেও জানায় এনডিটিভি।

কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা অভিষেক মনু সিংভি স্বীকার করেন যে, জম্মু-কাশ্মীর বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করে মতভেদ দেখা দিয়েছে দলে। এ সম্পর্কে গত এক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করেছি আমরা। এই বিষয়টি ওপেন সিক্রেট ছিলো। তবে হ্যাঁ, আমরা এখন খুব কম সংখ্যক বিরোধী দলের মধ্যে রয়েছি, যারা এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়েছি ও বিরোধিতা করে ভোট দিয়েছি। তবে এটা গণতন্ত্র। আপনাকে সংখ্যার মাধ্যমেই যেতে হবে।

সোমবার কংগ্রেসসহ বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্যসভার অধিবেশনে কাশ্মীর সংক্রান্ত বিলটি পাস করাতে সমর্থ হয় কেন্দ্রীয় সরকার। এসময় রাজ্যসভার অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করে বহু বিরোধী দল। ফলে কমে যায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা। অন্যান্যরা সরকারের পক্ষেই যায়। এনডিএ রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু হলেও ভোটাভুটি সরকারের পক্ষেই যায়। মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি, নবীন পট্টনায়েকের বিজু জনতা দল, জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি, এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিও সরকারের সমর্থনে ভোট দেয়। সব মিলিয়ে সরকারের পক্ষে সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৭। ফলে রাজ্যসভায় পাস হয়ে যায় কাশ্মীর সংক্রান্ত বিলটি।

সূত্র বলছে, জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে দলীয় সভা আহ্বানের জন্য রাহুল গান্ধীকে অনুরোধ করা হলে তিনি কংগ্রেস সভাপতি না থাকায় কোনো বৈঠক ডাকতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন। অবশ্য পরে সংসদের নিম্নকক্ষে গৃহীত হওয়ার আগে জম্মু-কাশ্মীর বিষয়ে বিরোধী জোট গঠনের লক্ষ্যে লোকসভার কংগ্রেস সদস্যরা সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। বৈঠকে প্রথমে অনেক মতবিরোধ হলেও শেষে বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপ সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস।

গত মে মাসে জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরেই দলের খারাপ ফলের দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন রাহুল গান্ধী। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের মত অপ্রকাশ্যে রাখলেও পরে তা প্রকাশ করেন। জম্মু-কাশ্মীর বিষয়ে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিরুদ্ধে মত ব্যক্ত করেন রাহুল গান্ধী। সোনিয়া গান্ধীও এই ধরনের সিদ্ধান্তের পক্ষে নেই বলে সূত্র জানায়।

শেষপর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা এবং কাশ্মীরকে দ্বিখণ্ডিত করার বিষয়টি সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।

৩৭০ ধারা বিলোপের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ ও কপিল সিব্বালের মতো নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘গণতন্ত্রের হত্যার’ বলে অভিহিত করেন।

লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদরা এর প্রতিবাদে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে ওয়াকআউটও করেন। তবে সংসদের বাইরে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা বেরিয়ে এসে ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তবে এটিকে নিজেদের “ব্যক্তিগত” মতামত হিসাবে উল্লেখ করেন তারা।

নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে মুম্বইয়ের কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরা টুইট করেছেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে ধারা ৩৭০ নিয়ে একটি উদার বনাম রক্ষণশীল বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির উচিত আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গী এবং বিতর্ককে সরিয়ে রেখে ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত নেয়া। যাতে জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি বজায় থাকে এবং কাশ্মীরের যুবকদের চাকরি এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ন্যায়বিচার মেলে’।