দেশে সৌখিন-সম্ভ্রান্ত বড় কর্তাদের টেনিস খেলতে দেখা যায়। অথচ রাজধানীর নিউ মার্কেটের নিত্যপণ্যের বাজারের দোকানগুলোতে সারি সারি টেনিস ব্যাট ঝুলছে! এই দৃশ্য দেখলে ভিনদেশি যে কেউ ভাবতে পারেন এদেশে শারাপোভা না হোক সানিয়া মির্জার মতো টেনিস খেলোয়ার কিংবা এই খেলার অনেক ভক্ত আছে। কিন্তু ঢাকাবাসীদের মধ্যে সম্ভাব্য শারাপোভা, সানিয়া, ফেদেরার কতজন সেই সংখ্যা জানা না গেলেও বিক্রেতারা জানালেন গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসব ব্যাট বিক্রি হচ্ছে দেদার। তবে টেনিস বল নয়, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসা-বাড়িতে-ফ্ল্যাটের ভেতরে মশার দলকে দমন করতে এই ব্যাট হাতে নিচ্ছে নগরবাসী। চার্জ সুবিধাযুক্ত এসব ব্যাটের ধাতব জালে আটকে বিদ্যুতায়িত হয়ে মরছে মশা।
গরমের সঙ্গে চীন থেকে আমদানি করা এসব ব্যাটের চাহিদা বাড়ছে এবং বৃষ্টির পর আরও বাড়বে জানিয়ে নিউ মার্কেটের এশিয়া ইলেকট্রনিকের দোকানি মোহাম্মদ সোহেল বলেন: মশা মারার আইটেমের শেষ নাই। এসবের মধ্যে এই ব্যাট চলছে সবচেয়ে বেশি। চীন থেকে আমদানি করা এসব ব্যাট আমরা বিক্রি করছি ২৫০-৩০০ টাকায়। প্রতিদিন ৮-১০টি ব্যাট বিক্রি করি, মাঝে মাঝে ১৫-২০টিও যায়।
শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা ও কটুগন্ধের মশার কয়েল এবং বিষাক্ত স্প্রের চেয়ে মধ্যবিত্তের গোছানো ঘরে এখন এই ব্যাট মশা মারার হাতিয়ার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আগের ব্যাটটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এশিয়া ইলেকট্রিক থেকে ৩০০ টাকায় আরেকটি ব্যাট কিনতে আসা ষাটোর্ধ্ব এক ক্রেতা বলেন: আমার শ্বাস কষ্ট আছে। কয়েলের ধোঁয়ার কষ্টটা বেড়ে যায়, অ্যারোসলও একই কারণে ব্যবহার করতে পারি না। ঘরে মশাতো মারতে হবে। এজন্য এই ব্যাট কাজে আসে। আগেও কয়েকটি নিয়েছি। কিন্তু এসব বেশিদিন টেকে না। কয়েক মাস পর পর একটি কিনতে হয়।
এই দোকানের পাশেই মায়া ইলেকট্রনিকের দোকানি মোহাম্মদ মাসুম বলেন: কয়েলের গন্ধ অনেকে সহ্য করতে পারে না, অনেকের আবার গলায় জ্বালাপোড়া হয়। কয়েল-অ্যারোসল বাচ্চাদের জন্যও ক্ষতিকর। এসব দিক খেয়াল রেখে বাসা-বাড়ির ক্রেতারা এই ব্যাট কিনছেন। এবার গরম শুরু হওয়ার পর প্রথম বৃষ্টি এবং এরপর গরম বাড়তে থাকায় গত সপ্তাহে বিক্রি ভালো হয়েছে।
তবে এই ব্যাট সব জায়গায় এখনো এতোটা কার্যকর নয় কিংবা সাড়া ফেলতে পারেনি বলে জানান জননী হার্ডওয়্যার নামের একটি দোকানের দোকানি আক্তার হোসেন।
মশা মারার স্প্রে অ্যারোসলের পাইকারি এই বিক্রেতা বলেন: অ্যারোসল সবসময়ই চলে। শীতে কিছুটা কম বিক্রি হলেও এখন গরম যতো বাড়ছে বিক্রি ততো বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ কার্টন অ্যারোসল বিক্রি হচ্ছে।
দোকানিদের দেয়া তথ্যমতে, মশা মারার ব্যাট এবং অ্যারোসলের ক্রেতাদের মধ্যে বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত নগরবাসীর সংখ্যাই বেশি। নিম্নবিত্ত নগরবাসীর এখনো ভরসা বিভিন্ন বিধ্বংসী নামের নানা আকৃতির কয়েলে।
রাজধানীর অলি-গলির মুদি দোকানগুলোতে বিকেল নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে কয়েল ক্রেতাদের ভিড়।