চট্টগ্রাম থেকে: জহুর আহমেদে আগেও তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন মুমিনুল হক। কখনও খুব উচ্ছ্বসিত উদযাপন দেখা যায়নি। অতি-উচ্ছ্বাস তার স্বভাবেও নেই। বড় বড় কীর্তি গড়েও থাকেন নির্লিপ্ত। সেই স্বভাববিরুদ্ধ কাজটাই করলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর। মনের ভেতর জমে থাকা সব কষ্ট যেন বের করে দিলেন বাঁধনহারা উদযাপনে!
বুধবার সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে চা বিরতির আগে ৯৩ রানে দাঁড়িয়ে অফস্পিনার সান্দাকানকে পরপর দুই চার মেরে তিন অঙ্কে ছুঁয়েছেন মুমিনুল। মাইলফলক স্পর্শ করতে প্রান্ত বদলের সময় মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দৌড়ের মধ্যেই সারলেন করমর্দন। অপর প্রান্তে পৌঁছে ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে করা উচ্ছ্বাসের মাঝে খুঁজে পাওয়া গেল ভিন্ন এক মুমিনুলকেই।
পরে বল বাউন্ডারি ছুঁলে মুমিনুল ছুটে সীমানার অনেকটা কাছেই চলে গেলেন। এদিক-ওদিক হাত ছুঁড়লেন। আগে কখনও এভাবে সেঞ্চুরি উদযাপন করতে দেখা যায়নি তাকে। উদযাপন দেখে বিস্ময় ছুঁয়ে গেল স্টেডিয়ামে হাজির সংবাদকর্মীদের মাঝেও! সবার মুখেই একই কথা- এ কোন মুমিনুল?
মুমিনুল উদযাপন কেন এতটা বাঁধনহারা? সেটি নিয়ে রহস্য থাকার কথা নয়! গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের একাদশ থেকে বাদ দেয়া হয় মুমিনুলকে। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্টে যার সর্বোচ্চ গড়, তাকেই কিনা বাদ দেয়া হল। এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত হন সবাই। তখনকার কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের চাওয়া বাস্তবায়ন করতেই মুমিনুলকে বাদ দেন নির্বাচকরা।
দেশের সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সমালোচনার স্রোত বইতে শুরু করে। চণ্ডিকা তখন ম্যাচের দিন ভোর ৪টার সময় টুইটারে লিখেছে, ‘উভয় সংকটে পড়েছি। জাতির আবেগ নাকি টিম কম্বিনেশন! নির্ঘুম রাত।’ মুমিনুলকে বাদ দেয়ায় হইচই হওয়ায় এমন টুইট করেছিল হাথুরু।
পরের টেস্টে ফিরিয়ে আনা হলেও তাতে ক্ষত পূরণ হয়নি মুমিনুলের। সেসব কষ্টই যেন উড়িয়ে দিলেন সেই হাথুরুর শিষ্যদের বিপক্ষে সেঞ্চুরির উদযাপন করেই! সাগরিকার এই ভেন্যুতে দুই দলের ড্রেসিংরুম একমুখী, অনেকটা কাছাকাছিও। মুমিনুল সেঞ্চুরির পর যে রক্তচক্ষু ভঙ্গি দেখালেন সেটি হয়ত একটি বার্তাই! যা নিজ ড্রেসিংরুমমুখীও হতে পারে। সময়ের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যানকে টেস্ট তকমা দিয়ে যেভাবে বিচার করা হয়, সেটি যেমন হাথুরুর আমলে তল পেয়েছে, তাতে ভাল রসদ যোগান দিয়েছেন তো দেশিকর্তারাই!
একশ ছুঁইছুঁই স্ট্রাইকরেটে মুমিনুলের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে (১২৩) চা-বিরতি পরপরই বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ২৭৫ হয়ে গেছে। মুশফিক অপরাজিত ৫৬ রানে। দুজনের জুটিটা ১৫৬ রানের হয়ে গেছে।