চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

জনবলের অভাবে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত

মহিউদ্দিন মুরাদ: লক্ষ্মীপুরে গ্রামে গঞ্জে কোভিড-১৯ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিন আশংকাজনক হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। একই সাথে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবলের অভাবে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

শুধু তা-ই নয়, করোনা শুরুতেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপন করা হলেও লোকবলের অভাবে সেটি চালু করা যায়নি এখনও।

কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে  ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে ৩১ শয্যার হাসপাতালের অবকাঠামো ও কম জনবল দিয়ে। এর মধ্যে ২৬  জন চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছেন ১০জন, মোট ৫০ স্টাফ কর্মচারী মধ্যে আছেন ২২ জন। ২৪ জন স্টাফের স্থলে রয়েছেন ৮ জন। পূরো হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় রয়েছেন একজন। এছাড়া হাসপাতালে নেই কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মী।

কোভিড-১৯ এর শুরুতেই উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর হিসেবের খাতায় আছে ২টি। নেই কোনো আইসিউ’র ব্যবস্থা। দীর্ঘ সময় পার হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমটি জনবলের অভাবে রোগীর জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে বোতল ভর্তি অক্সিজেন। যা অল্প সময়ের মধ্যে পুরিয়ে যায়।

হাসপাতালটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, একজন অফিস কর্মচারী সিরাজ মিয়া সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ জন্য সেটি চালাতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিলো। এর মধ্যে ধারন ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিভিন্ন ধরনের রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে করোনা উপসর্গ জ্বর, কাঁশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নারী, পুরুষ ও শিশু রোগী। শয্যা সংকটে পাশাপাাশি থাকছে জ্বর, সর্দি কাঁশি, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগী।  প্রতিদিন আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে কয়েক’শ রোগী। এরমধ্যে ভর্তি থাকছে এক’শ থেকে দেড়’শ রোগী। ফলে অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন ডাক্তার এবং নার্সরা।

এ বিষয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স মুক্তা বেগম চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, করোনা রোগীসহ অতিরিক্ত রোগীদের সেবা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। কারণ এখানে প্রয়োজনীয় জনবল নেই।

অন্যদিকে হাসপাতালটিতে নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকেনা বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এতে হাসপাতালের  সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

হাসপাতালের কর্মচারী মো. শাহজাহান জানান, পরিচ্ছন্ন কর্মী না থাকায় হাসপাতালের কাছের বাইরে এ সব পরিচ্ছন্নতার কাজ তাকেই করতে হচ্ছে।

ওই এলাকার পরিবেশ কর্মী ইসমাইল হোসেন রাজু জানান, মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত লোকবলের অভাবে হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমটি অদ্যাবধি চালু করা হয়নি। নেই প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও নার্স। এতে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। একই কথা জানান রোগীর সাথে আসা ভুক্তভোগীরাি।

কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের এর সাথে যোগাযোগ করা হলে জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, একজন স্টাফ সিরাজ মারা যাওয়ার পর সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেমটি চালু করা সাময়িক সমস্যা হয়েছে। হাসপাতালটিতে করোনা পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটলেও তা সামাল দিতে কঠিন হয়ে পড়বে তাঁর জন্যে। এর মাঝে করোনা পরিস্থিতি ক্রমাবনতি ঘটেই চলছে।

এই উপজেলায় এ পর্যন্ত একজন স্টাফ সিরাজসহ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ জন। ইতোমধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক নার্স করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হয়েছেন।

তিনি জানান, কমলনগরে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছেন ২১ জন, মোট আক্রান্ত ৪২৮ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ১৫৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কমলনগরে বর্তমানে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশ।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবের মতে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মোট মারা গেছে ৭৬ জন। করোনা উপসর্গসহ মারা গেছে প্রায় এক’শ জন। লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনায় এ যাবৎ মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৬৭৬ জন।

হাসপাতালে অক্সিজেনের সাময়িক সংকটের কথা উল্লেখ করে বলে জেলার সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যকর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গফ্ফার দাবি করছেন, একজন স্টাফ মো. সিরাজ করোনা আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যাওয়ার পর সাময়িক  সমস্যা হয়।

তার দাবী, এখন পরিস্থিতি ঠিক আছে।

তবে হাসপাতালের জনবলসহ অন্যান্য সুবিধে না বাড়ালে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী।