জনগণ থানায় পুলিশের কাছে যে প্রত্যাশা করে তা পূরণে অনেকাংশে পূরণে ব্যর্থ হয়েছি। পাশাপাশি যানজটমুক্ত ঢাকা মহানগরী প্রত্যাশা করেছিলাম সেটা করতে পারিনি।
বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পুলিশে ৩২ বছর চাকরির শেষ কার্যদিবসে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে প্রায় চার বছর সাত মাস কর্মমুখর সময় শেষে দু’টি ব্যর্থতার কথা জানান মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, এক হাজার ৬৮০ দিনের কমিশনার থাকাকালীন দুই জায়গায় ব্যর্থতার আক্ষেপ আছে।
একটি হচ্ছে, জনগণ থানায় যে সেবা প্রত্যাশা করছে, অনেকাংশে তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা অনেক উন্নতি করলেও, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি।
আরেকটি হচ্ছে, মহানগরী ঢাকার যানজট। আমরা যে যানজটমুক্ত গতিশীল ঢাকার প্রত্যাশা করেছিলাম। সেটা করতে পারিনি। তবে এ দায় শুধু ডিএমপির নয়। ঢাকায় সিগন্যাল ব্যবস্থা একটি সংস্থা দেখভাল করে, পানি জমলে আরেক সংস্থা দেখে, সড়ক দেখে আরেক সংস্থা। এর সঙ্গে আছে আমাদের আইন না মানার সংস্কৃতি অন্যতম আরেকটি কারণ। এক্ষেত্রে শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা সফল হতে পারিনি।
সফলতার বিষয়ে ডিএমপি কমিমনার বলেন, এ ছাড়াও জনগণের হয়রানি বন্ধে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার বন্ধ, থানায় জিডির ফরমেট করা ফরম, ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। কমিশনার হিসেবে আমি শতভাগ সফল হয়েছি তা বলবো না তবে অনেক পরিবর্তন এনেছি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার গুলশান হামলায় স্মৃতি তার সামনে দুজন চৌকস অফিসারের মৃত্যু ও বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইভেন্টে নিরাপত্তা বিষয়ে বর্ণনা করেন।
কমিশনার বলেন, একবার অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে আসতে চায়নি। এরপর তাদের দেশের একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক পাঠিয়েছিল, আমরা তাদেরকে আমাদের নিরাপত্তা প্রেজেন্টেশন দেই। তারা আমাদের প্রেজেন্টেশন মুগ্ধ হয়েছিল এরপর অস্ট্রেলিয়া খেলতে এসেছে। নিরাপদে বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলে গিয়েছে। তারা আমাদের নিরাপত্তা-ব্যবস্থায় প্রশংসাও করেছে।
বিভিন্ন দেশের সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারদের নিয়ে একটি সম্মেলন হয়েছিলো। সেই সম্মেলন শেষে নিরাপত্তার বিষয়ে অন্তত ৮০-৯০ টা এ্যাপ্রোসিয়েট লেটার পেয়েছি। প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশ্বমানের, যা সবক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হয়েছে।
পুলিশ সদস্যদের অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্যায়-দুর্নীতি দেশের সব পেশাতেই কম-বেশি আছে। আমার দায়িত্বকালীন সময় পুলিশের দ্বারা যেন মানুষ হয়রানীর শিকার না হয়, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ৯৯ ভাগ কমিয়ে আনতে পেরেছি।
এর পরেও ডিএমপির কোন সদস্য যদি অপেশাদার আচরণের সঙ্গে জড়িত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থা বা বহিস্কার নয়। আমার সময়কালে ডিএমপির বহু সদস্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিবর্তন অনেক করেছি, শতভাগ সফল বলবো না। তবে উন্নতি হচ্ছে, কেউ আইন বহির্ভূত কাজ করলে সেই দায় ব্যক্তির, পুলিশের নয়। কেউ অপরাধ করলে যথাযথ আইনে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে।
ডিএমপিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩৪ হাজার সদস্যকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ডিএমপি ৩৪ হাজার সদস্যেরর মনোভাবের পরিবর্তন করা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। তাদেরকে বুঝানো, কোন ধরনের বল প্রয়োগ করে ছড়ি ঘুরিয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা যায়না। এটি আমরা করতে পেরেছি।
একটি দেশে আইন তৈরি হলে সবাই মানবে আর ২/৪ জন না মানলে আইন প্রয়োগ করবে। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ আইন মানতে চায় না। আইন মানতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা ছিলো আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমার কার্যকালীন সময়ে ডিএমপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, এর কোন সত্যতা নেই। এটি যারা বলে এবং প্রচার করে তা উদ্দেশ্যমূলক। গাড়ি ভাংচুর-জ্বালাও পোড়াও হবে, সরকারি অফিসে আগুন দিবে এমন যেকোন নৈরাজ্য প্রতিহত করে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের উপর ন্যস্ত। এ ক্ষেত্রে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কথা বললে, এটি তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বলছেন। ডিএমপি সবসময় আইন-বিধি অনুযায়ী কাজ করেছে।