দেশে ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সংস্কৃতিই হতে পারে প্রধান হাতিয়ার বলে মতপ্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তরুণ সমাজ দেশীয় সংস্কৃতিতে যুক্ত থাকলে জঙ্গিবাদ অনেকাংশে কমে আসবে বলেও জানান তারা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের সমাজে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আমাদের তরুণ সমাজ যদি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতো তবে মৌলবাদী গোষ্ঠী তাদেরকে ভ্রান্তপথে পরিচালিত করার সুযোগ পেত না। সমাজের সর্বস্তরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশ ঘটাতে পারলে তরুণ সমাজকে জঙ্গিবাদের মত ভ্রান্তপথে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, প্রধানত দুটো কারণে তরুণ সমাজ জঙ্গিবাদের প্রতি ঝুকে পড়ছে।প্রথমত সমাজে প্রচলিত যে ব্যবস্থা রয়েছে তারা মনে করছে এটা ঠিক নয়। দ্বিতীয়ত ইহকাল ক্ষণস্থায়ী এবং পরকাল চিরস্থায়ী, এই ধারণায় উৎসাহী হয়ে অপরাধ করে হলেও তারা পরকালের লাভের আশায় এ ভ্রান্ত পথে পা বাড়াচ্ছে।
‘যখন তরুণ সমাজ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিমুখ থাকে বা তাদের করার কিছুই থাকে না তখনই মৌলবাদী গোষ্ঠী সে সুযোগ গ্রহণ করে।ধর্মীয় বিভিন্ন কমিউনিটিতে তরুণদের এ পথে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু শহর-নগর, গ্রাম-গঞ্জে যদি নাটক থিয়েটারসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো যায়, তাহলে মৌলবাদীরা তরুণদের ভুল পথে চালিত করার সুযোগ পাবে না। কারণ যেসব তরুণ নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারণ করে তারা নৈতিকভাবে শক্তিশালী থাকে। তাই তাদের ভুল পথে পরিচালিত করা সহজ নয়।’ বলেন বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হওয়াকেও সহিংসতার পথ বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, যখন তারা প্রচলিত সিস্টেমে অসন্তুষ্ট হয়। তখন তারা তাদের মতপ্রকাশ করতে চায়। যখন তাতে বাধা পায় তখনই তারা সহিংসতার পথ বেছে নিতে উৎসাহী হয়।
যারা ইতোমধ্যেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে তাদের ফিরে আসার সুযোগ কম থাকলেও যারা এখনও জড়ায়নি বা ঝুঁকিতে রয়েছে, সমাজের প্রতিটি স্তুরে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো গেলে তাদেরকে এ ভুল পথ উদ্বুদ্ধ হওয়া থেকে ফেরানো যায় বলে মত দেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে জঙ্গিবাদের বিস্তার অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক(আইজিপি) নুরুল হুদা।
এবিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে নুরুল হুদা বলেন, তরুণদের এ পথ থেকে ফেরাতে হলে নিজস্ব সংস্কৃতির বিস্তার ঘটাতে হবে। পাশাপাশি তাদেরকে বোঝাতে হবে যে তারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে।
সার্বিকভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কৌশল’ প্রণয়ন করতে হবে বলে মত দেন সাবেক এ পুলিশ প্রধান। যে কৌশলে প্রতিরোধ এবং প্রতিকারমূলক উভয় ব্যবস্থার সমন্বয় থাকতে হবে।