যাদের হাত ধরে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে তাদের শীর্ষে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র প্রতিষ্ঠাতা মুফতি হান্নান। তার তৎপরতায় জঙ্গিবাদ আজ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বোচ্চ আদালতে রিভিউ আবেদন বাতিল হওয়ার পর মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় বহাল থাকার পর বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গিবাদের বিচারের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে তার মৃত্যুদণ্ড।
মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুর রশিদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘এটি আদালতের স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারের সংস্কৃতির ওপর মানুষের আস্থা আরো বাড়ল। সাধারণ মানুষকে এরা যেভাবে হত্যা করেছে তারপরও যদি এরা পার পেয়ে যায় তাহলে সেটা তাদের নাশকতামূলক কাজকে আরও উৎসাহিত করতো। এখন যে বিচার প্রক্রিয়া চললে তা তাদের ভিত্তিমূলে অাঘাত করবে।’
তিনি মনে করেন: মুফতি হান্নান যেহেতু জঙ্গি সংগঠনের একজন অন্যতম শীর্ষ নেতা তাই তার বিচার তাদের সংগঠনকে দুর্বল করতে বড় ভূমিকা পালন করবে।
জেনারেল রশিদ বলেন: সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, কারাগার থেকে কিছুদিন আগেও সে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছে। তার মানে সে তখনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল। এখন তার অবর্তমানে জঙ্গিবাদ নির্মূলের দিকে আরো ভালোভাবে এগিয়ে যাবে বলে আশা করছি।
‘তবে সামগ্রিকভাবে জঙ্গিবাদ দমনে বহুমুখি কৌশল গ্রহণ করতে হবে।’
নিজেদের দুর্বল উপস্থিতি জানান দিতেই জঙ্গিরা চোরাগোপ্তা বা আত্মঘাতী হামলা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে বর্তমানে জঙ্গিরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। তাই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে তারা নাশকতা চালানোর অপচেষ্টা করছে।
মুফতি হান্নানই শেষ নয়
মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন: ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের দায়ে মৃত্যুদণ্ড আমাদের দেশের আইনে রয়েছে। সে অনুযায়ীআদালত মুফতি হান্নানের ফাঁসি দিয়েছেন। এতে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। কারণ এক মুফতি হান্নানের ফাঁসির মাধ্যমেই যে জঙ্গিবাদের বিনাশ হবে তেমনটা নয়। কারণ বাংলাদেশ থেকে মৌলবাদি রাজনৈতিক আদর্শ বিনাশ না করা পর্যন্ত এদের বিনাশ হবে না।’
তিনি বলেন: ‘এক মুফতি হান্নান গেলেও মৌলবাদি রাজনীতির ফলে শত শত মুফতি হান্নানের জন্ম হবে। কারণ তারা যখন এ পথে আসে, তখন নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিণতি জেনেই আসে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে বিষয়টিকে তারা ইমানি মৃত্যু বলে আখ্যায়িত করে। তাই এ অপব্যাখ্যা রোধে মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’
জামায়াতের আমীরসহ শীর্ষ নেতৃত্বের ফাঁসি কার্যকরের পর তাদের মতো গোপন জঙ্গি সংগঠনেও ধস নামবে কিনা জানতে চাইলে চ্যানেল আই অনলাইনকে শাহরিয়ার কবির বলেন: আমি কোনোভাবেই এটাকে ধস মনে করছি না। কারণ জঙ্গিবাদি আদর্শের সঙ্গে যারা জড়িত তারা মৃত্যুকে ভয় পায় না। নিজেদের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই তারা এ পথে আসছে।
‘তাদেরকে নির্মূলের একমাত্র উপায় হলো: তাদের অপআদর্শকে ধ্বংস করা, চিরতরে নির্মূল করা।’
তা না হলে জঙ্গিবাদের নতুন শাখা প্রশাখা বিস্তৃত হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের মৌলবাদি আদর্শকে যদি গোড়া থেকে নির্মূল করা যায়, তাহলেই কেবল বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
মুফতি হান্নান প্রতিষ্ঠিত হুজি-বি জঙ্গিরা দেশে অন্ততঃ ১৩ টি নাশকতামূলক ঘটনা ঘটায়। এতে নিহত হয়েছেন ১০১ জন, আহত ছয় শতাধিক মানুষ। এসব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলো মুফতি হান্নান। এসব ঘটনার মধ্যে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যাচেষ্টা মামলায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এখন কার্যকরের অপেক্ষায়।