কলেজে বন্দুক হামলায় সর্বশেষ ৯ জন নিহতসহ নাইন ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম নামধারী জঙ্গিদের চেয়ে অমুসলিম এবং সাদা সন্ত্রাসীদের হাতেই দ্বিগুণের বেশি আমেরিকান নিহত হয়েছেন। এর পরিমাণও অবাক করা।
শুক্রবারও যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন প্রদেশে বন্দুকধারীর হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ৭ জন। অতর্কিত হামলা চালানোর পর পুলিশের গুলিতে নিহত হয় হামলাকারী নিজেও। এর আগের হামলার সময়ও বেশিরভাগ বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করা ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠন ‘নিউ আমেরিকার’ সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা গেছে ২০০১-২০১৫ সালের মধ্যে ২০১৫ সালেই এমন ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এমন হামলায় নিহত হয় ৪৯৭ জন। এর মধ্যে জিহাদী সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত ৩১৪ ব্যক্তি। ননজিহাদী অভিযোগ আনা হয়েছে ১৮৩ জনের বিরুদ্ধে। কিন্তু দাবীকৃত জিহাদিদের দ্বারা নিহত হয়েছে ২৬ জন। আর অমুসলিম এবং সাদা সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতের সংখ্যা ৪৮। সর্বশেষ ৯ জন ধরলে সাম্প্রতিক হিসাবটা হবে ২৬’র বিপরীতে ৫৭ জন।
গত জুনেও অমুসলিম এক সন্ত্রাসী একটি চার্চে ঢুকে ৯ ব্যক্তিকে হত্যা করে। শুধু এটাই নয়, আমেরিকায় একরকম সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্য ও সাধারণ মানুষ প্রায় প্রতিনিয়ত নিহত হচ্ছে।
‘নিউ আমেরিকার’ সহকারী প্রোগ্রামার ডেভিড স্টিয়ারম্যান, সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ পিটার বার্জেনের দেয়া হিসবা অনুযায়ী ৯/১১’র পর গত জুন পর্যন্ত অমুসলিম সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রমণের সংখ্যা যেখানে ১৯টি।মুসলিম জিহাদীরা সেখানে আক্রমণ করেছেন ৭টি।
আমেরিকা জুড়ে ৩৮২ জন পুলিশদের উপর চালানো এক জরিপে তারা জানান মুসলিম সন্ত্রাসীদের চেয়ে অমুসলিম হামলার আশঙ্কা বেশি। সেখানে দেখা যায় আল কায়েদা-অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসী হামলার পক্ষে ৩৯ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ বা অমুসলিম সন্ত্রাসীদের হামলার পক্ষে ৭৪ শতাংশ মত দেন।
এই গবেষণার সাথে যুক্ত নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক চার্লিস কার্জম্যান বলেন, ‘দেশজুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আমাদের জানিয়েছেন যে, মুসলিম সন্ত্রাসীরা দেশের জন্য যতটা হুমকি, তার চেয়ে বেশি হুমকি অমুসলিম বা ডানপন্থী চরমপন্থীরা।’
চার্লিস কার্জম্যানের মতো একই রকম মত দিয়েছেন ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবাদ বিষয়ের গবেষক জন জি হর্গানও।
অমুসলিম সন্ত্রাসীদের দ্বারা ঘটানো হত্যাকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু-একটি ঘটনা-
২০১২ সালে ওয়েড মাইকেল পেজ নামে একজন নব্য নাৎসি উইনকনসিনের একটি মন্দিরে ঢুকে এলোপাথারি গুলি শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হয়। আর মারাত্মকভাবে আহত হয় তিন জন। পুলিশের গুলিতে পেজও নিহত হয়। তিনি ছিলেন সাদা অধিপত্যবাদী গ্রুপের সদস্য। যে সংগঠনের নাম নর্দান হ্যামারস্কিন।
আরেকটি ঘটনা ২০১৪ সালের। জেরাড ও আমান্দ্রা নামের এক দম্পতি লাসভেগাসের একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকেই গুলিবর্ষণ শুরু করে। এসময় রেস্টুরেন্টে খেতে বসা দু’জন পুলিশ অফিসার নিহত হন। পরে ওয়ালমার্টের পাশে আরেক জনকেও তারা হত্যা করে। এসময় তারা স্লোগান দেয় ‘আমাকে অতিক্রম করো না’ এবং ‘বিপ্লব শুরু’।
২০১৪ সালের নভেম্বরে আরেকটি ঘটনা ঘটে। ল্যারি ম্যাকুইলিয়ামস নামে একজন টেক্সাসের অস্টিনে পুলিশ সদরদফতর ও সরকারি ভবন লক্ষ্য করে ১০০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এসময় কেউ গুলিবিদ্ধ না হলেও পুলিশের গুলিতে ওই বন্দুকধারী নিহত হন।
এ নিয়ে মুসলিম প্রবক্তাদের অভিযোগ, আক্রমণকারী বা হত্যাকারী যখন অমুসলিম হয় তখন মিডিয়া অতিদ্রুত তার মানসিক অসুস্থতার দিকটি ফোকাস করে।
আমেরিকায় মুসলিম-অমুসলিম সন্ত্রাসী হামলার তর্ক দুই দশকেরও বেশি সময়ের। ১৯৯৫ সালে ওকলাহামায় এমন এক হামলায় ১৬৮ জন নিহত হয়। ৯/১১ পর এটা এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া বড় সন্ত্রাসী ঘটনা। এই হামলা একজন মুসলিম চালিয়েছে বলে প্রথমে বলা হলেও পরে টিমোথি জে ম্যাকভি নামের একজন সরকার বিরোধীকে গ্রেফতার করা হয় এবং সেসময় দ্রুতই এই মুসলিম তত্ত্ব শেষ করা হয়।