বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে চলে যাওয়া ১১ বছরের মুক্তামনি কি বুঝেছিল তার বেঁচে থাকার আর কোন আশা নেই? চিকিৎসকদের বারবার অনুরোধের পরও আর হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি ছোট্ট মুক্তামনি। এমনকি তার পরিবারও মেয়েটিকে আর হাসপাতালে নিয়ে যেতে আগ্রহী হয়নি।
অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে গত কয়েকদিন বেঁচে ছিল সে। এরপর মৃত্যুতে দুঃসহ যন্ত্রণার সমাপ্তি।
কয়েকদিন আগে মুক্তামনির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ডান হাতে ইনফেকশনের কারণে সৃষ্টি হয় নতুন ক্ষতের। অস্ত্রোপচারের পর হাতের ফোলা সাময়িক কমলেও সম্প্রতি তা আগের চেয়ে বেশি ফুলে ওঠে। সে সঙ্গে প্রবল জ্বর। রক্তশূন্যতাসহ আরো কিছু জটিলতায় ভুগছিল সে।
মঙ্গলবার রাত থেকে মুক্তামনি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। বুধবার সকাল ৮টার দিকে নিজ বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামে তার মৃত্যু হয়।
মুক্তামনির হাতে অস্ত্রোপচার করা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন মুক্তামনির শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর শুনে তার বাড়িতে চিকিৎসক পাঠালেও কোনভাবেই মুক্তামনি বা তার পরিবার হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি।
চ্যানেল অাই অনলাইনকে সামন্ত লাল সেন বলেন: মুক্তামনি রক্তশূন্যতা ও ইনফেকশনসহ নানা জটিলতায় ভুগছিল। তার রক্তের প্রয়োজন ছিল। আমি ওর বাবার সাথে কথা বলে ওকে নিয়ে ঢাকায় আসতে বলেছিলাম। এমনকি ওর বাড়িতেও চিকিৎসক পাঠিয়েছিলাম। অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলাম আজ সকালে। কিন্তু কোনভাবেই মুক্তামনি বা তার পরিবারকে রাজি করানো যায়নি।
‘এমনকি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালেও যেতে রাজি হয়নি মুক্তামনি।’
নানা শারীরিক জটিলতার কারণে মুক্তামনির পুরোপুরি আরোগ্য লাভ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। হাতের বিরল রোগের পাশাপাশি ফুসফুস ও লিভারেও সমস্যা ছিল তার।
দু’ সপ্তাহ অাগে হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে মুক্তামনির। তার ডান হাতটি অনেক বেশি ফুলে গিয়ে সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
সাতক্ষীরার মেয়ে মুক্তামনির দেহে জন্মের দেড় বছর পর একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর সেটি গাছের গুঁড়ির মতো রূপ নিয়ে বড় হতে হতে ডান হাত শরীরের চেয়ে ভারি হয়ে উঠে। এই বিরল রোগ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে তাকে ঢাকায় এনে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হয়।
গত বছরের ১১ জুলাই ঢাকায় আনা হয় তাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। ১২ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায় লিমফেটিক ম্যালফরমেশন রোগে ভুগছিল মুক্তামনি। এটি একটি জন্মগত রোগ।
ড. সামন্ত লালের তত্ত্বাবধানেই গত বছর মুক্তামনির অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তখন তার হাত থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের টিউমারটি অপসারণ করা হয়।
এরপর বাড়িতে ফিরে গেলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এমনকি রোগ শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।