বেঙ্গল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেছেন: শিক্ষিত এবং উদ্যমী এমন অনেক ছেলেমেয়ে আছেন, যারা কিছু করতে চান; চোখে-মুখে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু অর্থের অভাবে অনেকের স্বপ্ন স্বপ্ন-ই থেকে যায়। বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক তাদের পাশে দাঁড়াতে চায়। আমরা নিজেরাও ছোট। তাই ছোট ছোট উদ্যোক্তার সঙ্গে কাজ করব। ছোটদের সঙ্গে বড় হতে চাই।
সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া পাওয়া বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন এর আগে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন প্রথম সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আগামী তিন বছরের জন্য বেঙ্গল ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করবেন জসিম উদ্দিন।
প্রচলিত আইন অনুসারে কোন নতুন ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন লাগে। তবে বেঙ্গল ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ৫০০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রথমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দিকে নজর দিচ্ছি। যেহেতু আমরাও ছোট তারাও ছোট। মূল কথা হল-রিটেইল ব্যাংকিং ও হাউস লোনে যেতে চাই। এরকম ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটাকে চালু করার ইচ্ছা। প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রধান কার্যালয় এবং কর্পোরেট শাখা গুলশানে থাকবে। পাশাপাশি নিয়মানুযায়ী গ্রামে একটি শাখা উদ্বোধনের পরিকল্পনা চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে মতিঝিলে একটি শাখা খোলার ইচ্ছা আছে। কর্পোরেট ব্যবসা করব না-এটা বলা যাবে না। যাচাই-বাছাই করে বড় বিনিয়োগের দিকেও নজর দেয়া হবে।
নতুনত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাংক সেবা নিয়ে গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে চাই। গ্রাহককে যেন ব্যাংকে আসতে না হয়। কারণ, ইতোমধ্যে দেশে হোম ডেলিভারি চালু হয়ে গেছে। সে সুযোগটা নিতে চাই। সে জন্য পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বিকল্প নেই। এতে খরচও কম। দেশের কৃষি খাত অনেক উন্নতি করেছে। শিক্ষিত ছেলেরা কৃষি কাজে যোগ দিচ্ছেন। ফলে নতুনত্ব আসছে কৃষিতেও। এখন দেশে ড্রাগন চাষ হচ্ছে, ফলের চাষ হচ্ছে, বিশেষ করে বারোমাসি আমের চাষ। তাদেরকেই উদ্যোক্তা বানাতে চাই। যেসব এলাকায় পণ্যের কাঁচামাল উৎপাদন হয়, সেখানে গিয়ে বিনিয়োগ করতে চাই। এর মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা সম্ভব হবে। এটা আমাদের স্বপ্ন। একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে শুরুর দিকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ঠিক সময়ে সহযোগিতা পেলে সে দাঁড়াতে পারে। সে সময় আর্থিক সহযোগিতা করতে পারলে সারা জীবন ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে গ্রাহক।
দেশে যেসব ব্যাংক ভালো আছে, সেটা তাদের ম্যানেজমেন্ট এবং উদ্যোক্তা ভালো থাকার কারণেই সম্ভব হয়েছে। এই জায়গায় আমাদের উদ্যোক্তারা কোনো সুযোগের অপব্যবহার করবেন না বলে আমরা আশাবাদী। পুরোপুরি পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়া হবে। কারণ, উদ্যোক্তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্যবসায়ী এবং সবাই কষ্ট করে ছোট থেকে বড় হচ্ছেন। আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই ছোট থেকে ব্যবসাকে বড় বানানো যায়। সুতরাং সে আস্থার জায়গাটা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
ঋণখেলাপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কিছু গ্রাহক আছেন যারা ইচ্ছা করে ঋণখেলাপি হন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিপদে পড়ে, ব্যবসা পরিচালনা করতে না পেরে এবং নীতিমালা জটিলতায় খেলাপিতে পরিণত হন গ্রাহক।
তবে বেঙ্গল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মনে করেন, ছোট গ্রাহকরা কখনও টাকা নয়-ছয় করেন না। সময়মতো পরিশোধ করে দেন। দেশের সবচেয়ে বেশি লাভজনক গ্রাহক হল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চাই। তারাও অনেক সচেতন। এ ছাড়া দেশের অনেক বড় বড় কর্পোরেট গ্রুপ আছে, যারা কখনও ঋণখেলাপি হয় না। যেহেতু নতুন ব্যাংক, আমাদেরকে বুঝেশুনে সামনে এগোতে চান তিনি।
যদিও নতুন ব্যাংকের প্রতি দেশের মানুষের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তারপরও নিজেদের ব্যবসার সুখ্যাতিকে ভিত্তি করে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মাঝারি ও ছোট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও ব্যবসা করতে পারব।
ব্যাংকের সেবার বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক প্রডাক্ট তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেঙ্গল ফিক্সড ডিপোজিট, বেঙ্গল অ্যাডভান্স আর্নিং ডিপোজিট, বেঙ্গল মান্থলি আর্নিং ফিক্সড ডিপোজিট এবং বেঙ্গল ডাবল বেনিফিট ফিক্সড ডিপোজিট। এ ছাড়া বেঙ্গল ডিপিএস, বেঙ্গল লাখোপতি ডিপিএস, বেঙ্গল মিলিয়নিয়ার ডিপিএস, বেঙ্গল অ্যাডভান্স মিলিয়নিয়ার, বেঙ্গল কোটিপতি ডিপিএস এবং বেঙ্গল প্রথমা ডিপিএস সেবা পাবেন গ্রাহকরা।
আরও রয়েছে বেঙ্গল কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল জেনারেল সেভিংস অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল সুপ্রিম সেভিংস অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল এভারগ্রিন সেভিংস অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল স্কুল সেভিংস অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল প্যারল অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল প্রথমা অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল ওয়েজ আর্নার্স অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল প্রবাসী সেভিংস অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল নবান্ন অ্যাকাউন্ট, বেঙ্গল এসএনডি অ্যাকাউন্ট ও বেঙ্গল এসএমই কারেন্ট অ্যাকাউন্ট।