কনকচাঁপার বয়স তখন ছয়। বাবার কোলে বসে গাইছেন ‘কি বা তব নামখানি, আমারে শুধাও/ না বলা কথাটি মোর, যাও শুনে যাও’। ‘মোর’ শব্দটিতে কারুকার্যময় একটা মোচড় আছে। যাতে পর্যাপ্ত দরদ প্রকাশ পায়। কিছুতেই সেই দরদ আসছে না। ছোট্ট কনকচাঁপার পেট মোচড় দিয়ে ওঠে, কিন্তু গলায় মোচড় আসে না।
গান হচ্ছে না! বাবা বললেন, ‘চেষ্টা করো। আমি জানি তুমি পারবে।’ মেয়ের ওপর বাবার আস্থা দেখে আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল কনকচাঁপার। ব্যাস, একটা কথায় গান হয়ে উঠলো দরদমাখা, মোচড়ময়!
একই চিত্রনাট্যের সম্মুখীন হতে হলো আজকের ‘বড়’ কনকচাঁপাকে। পার্থক্য শুধু, সেদিন পরিচালক হিসেবে ছিলেন বাবা। আজ ছেলে। এবার ছেলের সুরে গাইতে হবে গান। গানের কথায় সেই মোচড়ওয়ালা, দরদভর্তি ‘মোর’ শব্দটা। এবারও কাঙ্ক্ষিত মোচড় হয়ে উঠছে না। পাশ থেকে ছেলে বলে উঠল— ‘আম্মু, এর চেয়ে কঠিন কঠিন সব গান তুমি পানির মতো গেয়েছো। এটাও পারবে।’
আবারও সেই শক্তি, সেই আস্থা। কনকচাঁপা বললেন, ‘বাবার সুরে গেয়েছি। স্বামীর সুরে গেয়েছি। আজ ছেলের সুরে গাইলাম। এই যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, পুরো পরিবার আমার ওপর অনাবিল আস্থা রাখে, এর মূল্য অশেষ। এই ভালোলাগা বলে প্রকাশ করার মতো না।’
গতকাল শনিবার তরুণ গীতিকার কামরুজ্জামান সরকারের লেখা ছেলে ফাইজুল ইসলাম খানের সুর দেওয়া ‘পূর্ণতা’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছেন কনকচাঁপা। এই গানের রেকর্ডিংয়েই এমন মধুর স্মৃতির সম্মুখীন হন তিনি।
নিজের গাওয়া গান শুনে দারুণ খুশি কনকচাঁপা বলেন, ‘ফাইজুল ইসলাম খান আমার ছেলে। সে গানটা সুর করেছে। গান লিখেছে কামরুজ্জামান সরকার। সেও আমার ছেলে। কামরুজ্জামানকে আমি পেটে ধরিনি সত্যি কিন্তু ফাইজুল ইসলামের মতোই ছেলের স্নেহ লালন করি ওর জন্য। ফলে এদের সম্মিলিত গান আমার দুই ছেলের গানই মনে হয়েছে। ছেলেদের গান আমার জন্য বিরল সৌভাগ্য। গানটা শুনে খুবই ভালো লেগেছে।’
গীতিকার কামরুজ্জামান বলেন, ‘কিছুদিন আগে এই গানটা লিখেছিলাম। কনকচাঁপাকে দিয়ে গাওয়াব এমন ইচ্ছায়। তাকে আমি মা বলে সম্বোধন করি। মায়ের মতো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা তার জন্য। তার কণ্ঠে আমার লেখা গান শুনব, সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় দারুণ লাগছে।’