১৫ মার্চ, ১৯৭১! অগ্নিঝরা মার্চের দিনগুলোতে উত্তপ্ত দেশ। স্বাধীনতার প্রশ্নে বাঙালি জাতির রক্ত তখন টগবগ করছে। পাকিস্তানের শোষণের হাত থেকে মুক্তির দাবি নিয়ে ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন উত্তাল থেকে উত্তাল হচ্ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল, মিছিলে মিছিলে উত্তপ্ত করে তুলে ক্যাম্পাস। কিন্তু পাক-বাহিনী ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষার্থী।
এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপাচার্যের পদ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সেই সময়ের উপাচার্য আবু সাঈদ চৌধুরী। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন তিনি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে এটাই ছিল একমাত্র পদত্যাগ।
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম একজন নায়ক। বাংলাদেশের দ্বিতীয় এ রাষ্ট্রপতির জন্ম ১৯২১ সালে, টাঙ্গাইলের নাগবারী গ্রামে। পিতা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের স্পীকার ছিলেন।
কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম এ ও আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৪৬ সালে নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন বৃটেন শাখার সভাপতি ছিলেন। লন্ডনের লিংকন্স ইন্ হতে বার-এট-ল ডিগ্রী লাভের পরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জুনিয়র অফিসার হিসেবে পেশাগত জীবনের সূচনা।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের এ্যাডভোকেট জেনারেল, ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি এবং কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন আবু সাঈদ চৌধুরী।