করোনা সংক্রমণের সময় তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা ছাঁটাই আতঙ্ক সৃষ্টি করে শ্রমিকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার ‘তৈরি পোশাক খাতে করোনাভাইরাস উদ্ভূত সংকট: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের কাছ থেকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পোশাক মালিক সমিতি প্রণোদনা আদায় করতে পারলেও শ্রমিকের অধিকার তারা নিশ্চিত করতে পারেনি।
ওয়েবিনারে টিআইবি বলছে, করোনা সংকটকালে প্রণোদনার অর্থ প্রাপ্তিতে জটিলতা, কার্যাদেশ না থাকা ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়া পরিশোধে বিলম্ব করায় এপ্রিল মাস থেকে অধিকাংশ কারখানা নিয়মিত মজুরি দিতে পারেনি। উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় কিছু কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে ছাঁটাই আতঙ্ক সৃষ্টি করে কর্মরত শ্রমিকদের দিয়ে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা কাজ করালেও অতিরিক্ত সেই কাজের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেনি- এমন অভিযোগও রয়েছে।
পোশাক মালিকেরা লে-অফ করা কারখানার শ্রমিকদেরও এপ্রিল মাসে ৬৫ শতাংশ বেতন প্রদানের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ অঙ্গীকার মানেনি কারখানাগুলো। লে-অফ ঘোষণার কারণে এক বছরের কম সময় কর্মরত অনেক শ্রমিক কোনও সুবিধা ছাড়াই চাকরি হারিয়েছেন। ফলে কিছু কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেক কারখানা ঈদ পরবর্তী ছয় মাসেও ঈদ বোনাসের বাকি অর্ধেক পরিশোধ করেনি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু কারখানা অগ্রিম নোটিশ প্রদান না করেই অর্ডার বাতিল করার অজুহাতে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব কারখানায় শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি। ফলে করোনা উদ্ভূত সংকটে শ্রমিকেরাই আর্থিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত না করা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ পোশাক খাতে সুশাসনের ঘাটতি আরও ঘনীভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে টিআইবি।
প্রণোদনার অর্থ প্রদানে রাজনৈতিক বিবেচনা করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে ভার্চুয়াল সম্মেলনে টিআইবি জানায়,
প্রণোদনায় পোশাক কারখানারগুলো যে অর্থ পেয়েছে তার মাত্র ১৬ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে শ্রমিকদের বেতন ভাতায়। সে অর্থ প্রাপ্তিতেও বঞ্চিত হয়েছেন শ্রমিকরা। দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিক সরকারি প্রণোদনার অর্থই পায়নি। অনেক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক নিয়মিত বেতন থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।
সংস্থাটি জানিয়েছে, একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মার্চ-মে পর্যন্ত বেতন এবং ঈদ বোনাসের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত ‘ওয়েজ গ্যাপ’ হয় যথাক্রমে ৩০ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ তৈরি পোশাক খাতে মোট কর্মরত শ্রমিক তাদের নিয়মিত বেতন ও ঈদ বোনাসের যথাক্রমে ৩০ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ কম পেয়েছে। অপর একটি গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাস উদ্ভূত সংকটে তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত প্রায় ৭৭ শতাংশ শ্রমিক তাদের পরিবারের সব সদস্যের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না।
টিআইবি পরামর্শ দিয়ে বলছে, করোনা মহামারি বিবেচনায় নিয়ে সব শ্রেণির শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তার বিধান সংযুক্ত করে শ্রম আইন, ২০০৬-এর ধারা ১৬ এবং ধারা ২০ সংশোধন করতে হবে। পাশাপাশি পোশাক খাতের উন্নয়নে করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ মোকাবেলায় সরকার ও মালিক সংগঠনগুলো কর্তৃক গঠিত বিভিন্ন কমিটিকে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে এসব কমিটি শ্রমিকদের অধিকার ও কারখানায় তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।