বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ ও রাশিয়া। পাবনার রূপপুরে নির্মিতব্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে সরকার।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের যে চুক্তি হয়ে আসছিল তারই চূড়ান্ত পর্যায় এ জেনারেল এগ্রিমেন্ট
২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুভাসকিং চুক্তিপত্রে সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ কেন্দ্র নির্মাণ করবে রাশিয়ার পরমাণু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সময়ের প্রয়োজনেই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র:
পরিবেশবাদী ও নানামহলের বিরোধীতা উপেক্ষা করে স্বাক্ষরিত হলো রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি। ঐতিহাসিক এই পরমাণু চুক্তি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের জ্বালানী নির্ভর প্রকাশনা মাধ্যম এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
তিনি বলেন,‘পরমাণু প্রযুক্তি এখন আর আগের অবস্থায় নেই। পরমাণু প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় রাশিয়া অন্যতম পাইওনিয়ার বা পথপ্রদর্শক। আর রূপপুর প্রকল্পে বর্তমান সময়ের সেরা পরমাণু প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হবে। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাপূরণে প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে নতুন পথের সন্ধানে যাওয়ার সময়ে এই চুক্তি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। আসলে এখন পরমাণু নির্ভর বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় না গিয়ে উপায়ও নেই। এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ এই প্রয়োজনীয়তা আগেই টের পেয়েছে। চীন, তুরস্ক, জাপান, ইরান এসব দেশে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে।
পরিবেশবাদীদের বিরোধীতা সম্পর্কে তিনি বলেন,‘যেকোনো কাজে বাধা আসবেই। আর পাওয়ার সেক্টরে তারা সবসময়ই বিরোধীতা করেই আসছে। তবে উন্নয়ন থেমে থাকার নয়। যে বিপর্যয়ের ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে তা নিছক ভ্রান্তি ছড়াতেই। চেরোনোবিল দুর্ঘটনার পর পরমাণু প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়েছে। এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা দিয়েই প্লান্ট তৈরি হয়। চীনের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশেও প্রচুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে পুরো এশিয়াজুড়ে ১ লাখ মেগাওয়াটের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠবে। আর জাপানের ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পেছনে দায়ি ছিলো শক্তিশালী ভূমিকম্প। বাংলাদেশে সেধরণের বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু নেই। প্রকল্প অঞ্চল রূপপুর নিয়ে অনেক বছর আগে থেকেই নিরীক্ষা করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে’।
রূপপুর পরমাণু প্রকল্পের সারসংক্ষেপ:
চুক্তি অনুযায়ী ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ কেন্দ্র নির্মাণ করবে রাশিয়ার পরমাণু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। পুরো বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে সাত বছর সময় লাগবে। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এরপর মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ১৩ দফা আলোচনার ভিত্তিতে ৪৭টি অনুচ্ছেদ এবং ৫৭৩টি উপ-অনুচ্ছেদে চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হয়। চুক্তির প্রস্তাব গত বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) অনুমোদন দেয় সরকার।
এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে এক হাজার মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট চালু হবে এবং ২২ সালে পাওয়া যাবে আরো একহাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।গত আগস্ট মাসে পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠন করতে সংসদে বিল পাস হয়। আইন অনুযায়ী, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ’।