রাত পোহালেই ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ’ যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। নতুন চ্যালেঞ্জ, বাড়তি গুরুত্ব। বৃহস্পতিবার ইন্দোরে শুরু হবে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের প্রথম টেস্ট। এই ম্যাচ দিয়ে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হবে টিম টাইগার্সের। হলকার স্টেডিয়ামে খেলা শুরু সকাল ১০টায়।
চলতি বছরের ১ আগস্ট, অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট দিয়ে শুরু হয়েছিল ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। নয়টি দেশের মধ্যে দুই বছর ধরে অনুষ্ঠিত হবে সাদা পোশাকের লিগ পদ্ধতির লড়াই। হোম-অ্যাওয়ে ভিত্তিতে সবাই পাবে সমসংখ্যক ম্যাচ। প্রতি ম্যাচেই থাকবে নির্ধারিত পয়েন্ট। ২০২১ সালের জুলাইয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষ দুই দল খেলবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল।
চ্যাম্পিয়নশিপে থাকা নয়টির মধ্যে সাতটি দেশেরই অভিজ্ঞতা হয়েছে সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে প্রতিদ্বন্দ্বী ও জনপ্রিয় করতে আইসিসির নতুন কাঠামোয় খেলার। অপেক্ষায় কেবল বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। অথচ দুই দলের প্রস্তুতিতে ফারাক যোজন যোজন!
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টুয়েন্টি সিরিজ শেষে টেস্ট খেলতে নামার আগে পাকিস্তান পাচ্ছে দুটি তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। যার মধ্যে একটি আবার গোলাপি বলে। আর বাংলাদেশ সেখানে ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলবে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়াই। বাংলাদেশ-ভারতের মতো অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টও হবে দিবা-রাত্রির।
প্রথমবারের মতো ভারতে পূর্ণাঙ্গ সফরে গিয়ে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ পায়নি বাংলাদেশ। টি-টুয়েন্টিতে যার প্রভাব দেখা না গেলেও টেস্ট সিরিজে প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক!
টেস্টে ভারত এক নম্বর দল। চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পর এপর্যন্ত খেলা পাঁচ ম্যাচেই জিতেছে বিরাট কোহলির দল। ভারতে এসে সবশেষ সিরিজে দাঁড়াতেই পারেনি সাউথ আফ্রিকা। সেই ভারতকে তাদের ডেরায় ঢুকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে র্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম হিসেবে চ্যাম্পিয়নশিপে আসা বাংলাদেশ?
টি-টুয়েন্টিতে নবম দেখায় এসেছিল প্রথম জয়। টেস্টে ইন্দোরে বাংলাদেশ-ভারতের সাদা পোশাকের লড়াইটা মুখোমুখি দেখায় দশম। বৃষ্টির আশীর্বাদে দুটি ম্যাচ ড্র করা গেছে, তবে দীর্ঘ পথচলায় জয়ের মঞ্চ কখনোই তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
দুই দলের মাঝে সবশেষ টেস্ট হয়েছিল ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, হায়দরাবাদে। সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি ভারত জিতে নেয় ২০৮ রানে। হারলেও পঞ্চম দিনের চা-বিরতির আগ পর্যন্ত লড়াই করতে পারায় বাহবা পেয়েছিল বাংলাদেশ!
সেই দলটির সঙ্গে বর্তমান দলের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। সেই ম্যাচের সেরা একাদশে থাকা তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, তাসকিন আহমেদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি নেই এবারের টাইগার স্কোয়াডেই।
বর্তমান দলটি তারুণ্যনির্ভর। সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, নাঈম হাসান, ইবাদত হোসেন, আবু জায়েদ রাহির মতো খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছেন টেস্ট স্কোয়াডে।
টি-টুয়েন্টি সিরিজে সম্ভাবনা জাগিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। টেস্টে যদি ভারতকে চাপে রাখা যায় তাহলে সেটিও হবে বড় অর্জন! টি-টুয়েন্টিতে পাঁচ নম্বর দলটি টেস্টে এক নম্বরে। কোহলি-রোহিত, পূজারা-রাহানে, জাদেজা-অশ্বিন, সামি-যাদবদের সামনে সাকিব-তামিমহীন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোটেও সহজ হওয়ার কথা নয়।
অধিনায়ক হয়ে ভারত সফরে যাবেন এমনটি স্বপ্নেও ভাবেননি মুমিনুল হক। সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ায় হুট করে তার কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে নেতৃত্ব-ভার। টেস্ট দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মনে করেন সাকিব-তামিমের না থাকা দলে তিনজনের অনুপস্থিতির সমান।
‘সাকিব ভাইয়ে ব্যাটিং-বোলিং আলাদা করলে দুইজন। তামিম ভাই নেই। আমি বলব তিনজন সেরা ক্রিকেটার আমাদের দলে নেই। তারপরও আমাদের ভালো খেলতে হবে। আশা করবো দলের সব খেলোয়াড় ভালো কিছু করতে উদগ্রীব ও ইতিবাচক থাকবে।’
মুমিনুলের শেষ কথাটির অনুরণন যেন দলের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে বড় চ্যালেঞ্জের আগে সেটিই এখন চাওয়া।