ভারতকে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে নিয়েছে পাকিস্তান। প্রথমবার ফাইনালে উঠেই শিরোপা বগলদাবা করলো সরফরাজ আহমেদের দল। তিন বিভাগেই দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৩৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩০.৩ ওভারে ১৫৮ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ভারতের বিপক্ষে এটিই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়। এর আগে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়টি ছিল ১৫৯ রানের।
গ্রুপ পর্বের পর ফাইনালেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের লড়াই হয়েছে একপেশে। গ্রুপ ম্যাচে ভারতের কাছে ১২৪ রানের বড় ব্যবধানে হারের প্রতিশোধ পাকিস্তান নিল যেন ওভালে ফাইনালের মঞ্চে। বিশাল লক্ষ্যের সামনে আমির ঝড়ে শুরুতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ভারতীয় শিবির।
৭২ রান তুলতেই হারিয়েছে ৬ উইকেট। লোয়ার মিডলঅর্ডারে হার্ডিক পান্ডিয়া একটু আশা জাগান। ৪৩ বলে ৭৬ করে তিনি রান আউট হলে ভারতের হার কেবল সময়ের অপেক্ষায় রূপ নেয়।
বিরাট কোহলিকে দ্রুত ফেরানো হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, ম্যাচের আগে এই কথা জপেছেন পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। এক ম্যাচ পর ইনজুরি থেকে ফিরে ফাইনালের মঞ্চে সেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজটা সারলেন আমির নিজেই। কোহলির উইকেট তো নিলেনই আগে-পরে তুলে নিলেন আরও দুই উইকেট। প্রথম স্পেলে তিন উইকেট নিয়ে ভারতীয় টপঅর্ডার ধসিয়ে দিয়েছেন আমির। ৬ ওভারের স্পেলে ৩ উইকেট নিতে খরচ করেছেন মাত্র ১৬ রান।
বিপর্যয় কাটাতে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন যুবরাজ সিং ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। সেই চেষ্টা থেমেছে অল্প সময়ের ব্যবধানেই। যুবরাজকে (২২) এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে পাঠান সাদাব খান। অনফিল্ড আম্পায়ার আবেদন নাকচ করে দিলে এই লেগস্পিনার রিভিউ নিয়ে সফল হন।
পরের ওভারেই ধোনি ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয়ে আসে প্রতিরোধের আশা। সাদাব খানের দ্বিতীয় শিকার হয়ে কেদার যাদব সাজঘরে ফেরায় ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ভারত।
মোহাম্মদ আমির ও হাসান আলী নেন তিনটি করে উইকেট। সাদাব খান দুটি ও জুনায়েদ খান নিয়েছেন একটি উইকেট।
টস জিতে পাকিস্তানকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে বিরাট কোহলি কি ভুল করেছিলেন? ম্যাচের বয়স দশ ওভারে যাওয়ার আগেই এই প্রশ্ন ওভালে উড়তে শুরু করে। সেই তালে তালে ফখর জামান (১১৪) এবং আজহার আলী (৫৯) ম্যাচের লাগাম আরও শক্ত করে ধরে ফেলেন। শুরুর এই শক্ত ভিতটাকে পাকিস্তান ৫০ ওভার শেষে ৩৩৮’এ নিয়ে যায়।
ওভালে রান তাড়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩২১ পর্যন্ত। হারার দলে নাম এই ভারতের। এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৮ জুন তাদের করা অত রান টপকে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
এদিন পড়ে পাওয়া জীবনে শতরানের ফুল ফোটান ফখর জামান। ব্যক্তিগত ৩ রানে থাকার সময় জসপ্রীত বুমরাহর পায়ের কারণে ‘নো’ হওয়ায় বেঁচে যান তিনি। এরপর ৯২ বলে তুলে নেন শতক।
ফখর সেই ভুল ছাড়া আর কোনও সুযোগ দেননি। ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় ছিল না এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই ওয়ানডে অভিষেক তার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১ রান দিয়ে শুরু ক্যারিয়ার। পরের দুই ম্যাচে ফিফটির পর এবার পান তিন অঙ্কের দেখা।
জীবন পেয়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন ফখর জামান। ইনিংস সাজানো ১২টি চার ও দুই ছয়ে।
এদিন পাঁচ বোলারকে ব্যবহার করেও শতরানের আগে উইকেট বের করতে পারেননি বিরাট কোহলি। দলীয় ১২৮ রানে আজহার আলী ৫৯ করে রান আউট হলে ভাঙে ওপেনিং জুটি।
আইসিসির কোনও আসরে এটিই পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি। ১৯৯৬ সালে ব্যাঙ্গালুরুতে আমির সোহেল ও সাইদ আনোয়োরের করা ৮৪ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ। মিডলঅর্ডারে মোহাম্মদ হাফিজও দারুণ খেলেছেন। ৩৭ বলে ৫৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। বাবর আজম করে যান ৪৭।