সৌরভ গাঙ্গুলি বনাম গ্রেগ চ্যাপেল দ্বন্দ্ব শুধু ভারতীয় ক্রিকেট নয়, বিশ্বক্রিকেটেও এক সময় তুমুল আগ্রহ জাগিয়েছিল। সৌরভ আকারে-ইঙ্গিতে বিভিন্ন সময়ে চ্যাপেলকে নিয়ে অনেক মন্তব্য করলেও বিস্তারিত কখনো বলতে চাননি। এই প্রথম একটি বইয়ে সরাসরি অভিযোগ করলেন, তৎকালীন কোচ গ্রেগ চ্যাপেল তার ক্যারিয়ার শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন।
প্রায় এক যুগ আগে ভারতের কোচের দায়িত্ব দেয়া হয় চ্যাপেলকে। সেই সময় দলটির কোচ ছিলেন কলকাতার ‘দাদা’ সৌরভ।
চ্যাপেলের সঙ্গে কী হয়েছিল সেই দিনগুলোতে সৌরভ তা বলেছেন ‘ইলেভেন গডস এন্ড এ বিলিয়ন ইন্ডিয়ান্স’ বইয়ে। বইটি লিখেছেন ক্রীড়া সাংবাদিক বড়িয়া মজুমদার। ৫০০ পৃষ্ঠার বইটি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সময় প্রকাশ করা হবে।
সৌরভের বয়ানে বড়িয়া লিখেছেন, ‘চ্যাপেল একদিন সন্ধ্যায় আমার রুমে আসেন। টেস্টের জন্য একটা দলের কথা বলেন। যেখানে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের নাম ছিল না। তার কর্মকাণ্ড বুঝতে আমি কিছুটা সময় নিচ্ছিলাম।’
এইসব ঘটনা ২০০৫ সালের। তখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ছিল ভারতের। চ্যাপেল হেড কোচ হয়ে আসেন ওই বছর জুলাইতে। মার্চে স্লো-ওভাররেটের কারণে ছয় ম্যাচ নিষিদ্ধ হন গাঙ্গুলি। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয় রাহুল দ্রাবিড়কে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে গাঙ্গুলিকে আবার অধিনায়ক করা হয়। বিষয়টি তখন পছন্দ ছিল না চ্যাপেলের। প্রথম ম্যাচের আগে সৌরভকে দায়িত্ব ছাড়তে বলা হয়।
সৌরভ সেটা না করে অধিনায়ক থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকান। ওই ইনিংসেই টেস্ট ক্রিকেটে ৫ হাজার রানের মাইলফলকে পা রাখেন। তৃতীয়দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, ‘এই ম্যাচের আগে আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। যার কারণে ম্যাচটিতে আমার নিবেদন অন্যরকম ছিল।’ সেদিন এরচেয়ে বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি সৌরভ।
অথচ এই চ্যাপেলই ২০০৩ সালে সৌরভকে অনেক সাহায্য করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে। সেই তিনি কোচ হওয়ার পর সম্পূর্ণ বদলে যান। এতদিন বাদে সৌরভ বললেন, ‘‘দল নির্বাচনে আমি তার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করি। পরিষ্কার করে বলে দেই যাদের তিনি বাদ দিতে চাইছেন, ভারতীয় ক্রিকেটে তাদের অনেক অবদান। মাত্র তিন মাস কোচ হয়ে এসে তার পক্ষে এটা বোঝা সম্ভব নয়। কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার আরও সময় নেয়া উচিত। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম তিনি ‘চ্যাপেল টিম’ করতে হন্যে হয়ে আছেন।’’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই সিরিজে প্রস্তুতি ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে ব্যাট করার সময় টেনিস এলবো ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন সৌরভ। আসল ম্যাচের আগে আর ঝুঁকি নিতে চাননি। কিন্তু চ্যাপেল সৌরভের কথা বিশ্বাস করতে চাননি।
‘আমি যখন রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে আসি চ্যাপেল তখন ড্রেসিংরুমে ছিলেন না। কিছুক্ষণ পর এসে জানতে চান কী হয়েছে। বললাম যে ইনজুরিতে পড়েছি। মূল ম্যাচের আগে আর ব্যাট করতে চাচ্ছি না। কিন্তু তিনি অনড় ছিলেন।’
‘আমি তাকে বলতে বাধ্য হই আর ব্যাট করবো না। কারণ টেস্ট খেলার এই সুযোগ আমি হারাতে চাই না। ওই সময়ে আমি ভাল টাচে ছিলাম।’
গাঙ্গুলি শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি খেলেন। সেই সময়ের হিসাবে প্রায় দুই বছর পর ২৬২ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন। সেদিনও কোচের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় তার, ‘আমি ড্রেসিংরুমে ফেরার পর চ্যাপেল জানতে চান এখন আর ব্যথা নেই? আমি তাকে বলি ব্যথা আছে কি না সেটা কোনো ব্যাপার নয়। সেঞ্চুরিটাই আসল। ব্যথাসহ কিংবা ব্যথা ছাড়া আমি ভারতের জন্য ব্যাট করে এসেছি।’
কোচের সঙ্গে এমন সম্পর্কে গাঙ্গুলি শেষ পর্যন্ত বিপাকেই পড়েন। ‘অলস’ আখ্যা দিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়।
‘আমি চ্যাপেলকে ডেকে জানতে চাই কেন দলে নেই। আমাকে তিনি বলেন আগে ফিটনেস প্রমাণ করতে হবে।’
‘ওই সিরিজে আমার বাদ পড়ার কোনো কারণ ছিল না। সেই সময়ে কয়েক বছরে আমার থেকে দলের অন্য কেউ ওয়ানডেতে বেশি রান করেনি। আমি তখন প্রথমবার বুঝতে পারি চ্যাপেল আমার ক্যারিয়ার শেষ করতে চাইছেন।’