চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

চ্যানেল আইয়ের সাথে আমার ভ্রমণের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ: ফারুকী

‘কোটি প্রাণে মিশে, আমরা এখন ২০-এ’

‘কোটি প্রাণে মিশে, আমরা এখন ২০-এ’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১ অক্টোবর চ্যানেল আই পা রাখলো বিশ বছরে। শতভাগ পেশাদারিত্ব, নতুনত্ব, সৃজনশীলতা ও তারুণ্যের জয়গান গেয়ে ১৯ বছর পার করার এই অধ্যায়। যে চ্যানেল নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির জায়গা নিয়ে কথা বলেছেন ছোট ও বড় পর্দার অসংখ্য গুণী মানুষেরা। চ্যানেল আইয়ের কুড়ি বছরের পদযাত্রায় চ্যানেলটি নিয়ে কিছুটা স্মৃতিকাতর দেশের মেধাবী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। চ্যানেল আইয়ের সাথে রয়েছে তার আত্মিক সম্পর্ক। ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে ‘টেলিভিশন’ নির্মাতার ভাষ্য হুবুহু তুলে ধরা হলো:

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত ‘আয়েশা’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে ৮ বছর পর ছোট পর্দায় ফারুকী

চ্যানেল আইয়ের সাথে ভ্রমণের ইতিহাস:
আমার নির্মিত অনেক কাজ চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হয়েছে। চ্যানেল আইয়ের জন্য আমার নির্মিত প্রথম কাজ সম্ভবত ‘চড়ুইভাতি’। এই প্রোডাকশনটি ছিলো তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের ইয়ুথ সেন্ট্রিক প্রোডাকশন। একটা নতুন যুগের সূচনা করেছিলো। শুধু তাই না, সেসময় ‘চড়ুইভাতি’র ভিসিডিও বোধহয় প্রকাশ করেছিলো, যা তৎকালীন সময়ে কোনো টেলিভিশন প্রোডাকশনের ভিসিডি হিসেবে প্রথম আমার যতদূর মনে পড়ে। মনে পড়ে ‘চড়ুইভাতি’ নিয়ে বিভিন্ন সাইবারক্যাফেতে গিয়ে ক্যাম্পেইনও করেছিলাম, যেন তরুণ প্রজন্ম এই প্রোডাকশনটির সাথে যুক্ত হয়। এই প্রোডাকশনটি তরুণদের কেন্দ্র করে গল্প বলা, হিউমারের নতুন ভঙ্গি, গল্প উপস্থাপনের আলাদা ঢঙ এরকম আরো অনেক কিছু বাংলা নাটকে বদলে দিয়েছিলো বলেই আমার ধারণা। আমার স্পষ্ট মনে আছে কোনো এক ঈদের সময় সেটা প্রচারিত হয়েছিলো চ্যানেল আইয়ে। এছাড়া আমার প্রথম বড় সিরিজ ‘একান্নবর্তী’, যা প্রচারিত হয়েছিলো চ্যানেল আইয়ে। এরপর একে একে ‘সিক্সটি নাইন’, ‘৪২০’ এছাড়া আমার অসংখ্য টেলিফিল্ম প্রচারিত হয়েছে চ্যানেল আইয়ে। এগুলো ছাড়াও আমার প্রথম সিনেমা ‘ব্যাচেলর’-প্রযোজনা করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। ফলে চ্যানেল আইয়ের সাথে আমার ভ্রমণের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ।

চ্যানেল আইয়ের সাথে প্রথম ‘বড়’ কাজের অভিজ্ঞতা:
তখন আমার ‘একান্নবর্তী’ প্রচারিত হয়েছে, ‘চড়ুইভাতি’ প্রচারিত হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মানুষ জনের কাছে প্রিয় এবং তরুণদের সাথে দারুণ একটা আত্মিক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। সেসময় ‘ব্যাচেলর’ নামের একটি ছবি বানানোর পরিকল্পনা করলাম, কিন্তু আমার কাছেতো কোনো টাকা পয়সা নেই! বিভিন্ন জনের কাছে এক লাখ, পাঁচ লাখ কন্ট্রিবিউট করতে বলছি। এরকম সময়ে একদিন আমি আর আনিসুল হক(কথা সাহিত্যিক) চলে গেলাম সাগর ভাইয়ের (ফরিদুর রেজা সাগর) কাছে। সাগর ভাই আমাদের দেখে বললেন, হ্যাঁ আনিস বলো কী ব্যাপার? আনিস ভাই বললেন, ফারুকী একটা সিনেমা বানাবে, সে একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আপনার কাছে। সাগর ভাই জিজ্ঞেস করলেন কী প্রস্তাব? আমি বললাম, সাগর ভাই আমি একটা সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছি, নাম ‘ব্যাচেলর’। ওই ছবিটা যখন বিজ্ঞাপন হবে তখন আপনার চ্যানেলে সেটা বিনা পয়সায় প্রচার করবেন, এটাই আমার প্রস্তাব। সাগর ভাই বললেন, ঠিকাছে বিজ্ঞাপন প্রচার করবা কোনো সমস্যা নেই। তো তোমার ছবি প্রডিউস করছে কে? আমি বললাম এখনো জানি না। বিভিন্ন জনের কাছে টাকা ধার চেয়েছি। তিনি শুনে বললেন, ওহ! আচ্ছা আচ্ছা! তখন চ্যানেল আইয়ের অফিস বেইলী রোডে। পাঁচ জন লোকের রুমে বিশ জন লোক! তো এরমধ্যেই সাগর ভাই পিভিএক্স-এ কাকে যেন একটা ফোন দিয়ে নীচে নামতে বললেন। তারপর দেখলাম একজন ছিপছিপে ভদ্রলোক সাগর ভাইয়ের রুমে ঢুকলেন। সাগর ভাই তাকে বললেন, হাসান। তখন জানলাম তিনি ইবনে হাসান খান। সাগর ভাই তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আনিস আর ফারুকী মিলে একটা ছবি বানাবে, নাম ‘ব্যাচেলর’। এটুকু বলে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ফারুকী তোমার সিনেমার বাজেট কতো? আমিতো এটুকু শুনে চুপ! কারণ আমিতো সিনেমার কোনো বাজেট করিনি, কীভাবে বাজেট করে তাও জানি না তখন। কিন্তু আমি আন্দাজে বলে ফেললাম আমার ছবির বাজেট ৭৫ লাখ টাকা! সাগর ভাই আবার ইবনে হাসান খানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ফারুকীকে ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে দাও। ‘ব্যাচেলর’ আমরাই প্রডিউস করবো। এখন উপরে নিয়ে যাও এবং তাকে এই মুহূর্তেই অ্যাডভান্স দিয়ে দাও।

সেই মুহূর্তটাকে আমার বিস্ময়কর মনে হলো! কারণ আমি জানি, একটি সিনেমা নির্মাণের জন্য অর্থ ম্যানেজ করা কতোটা কঠিন কাজ! জুতার সুকতলা ক্ষয় হয়ে যায়। সেখানে এই ব্যাপারটা আমার জন্য ছিলো মিরাকল! একদম যাদুর মতো বিষয়টা ঘটে গেলো। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই বিষয়টা ঘটে গেলো। এটাই হচ্ছে ফরিদুর রেজা সাগর। এরপর থেকে তাঁর সাথে আমার সম্পর্কটা এরকম। যখনই যেটা প্রয়োজন হয়েছে বলেছি, সাগর ভাই এটা করছি। তিনি বলেন, এটা করবা? করো! কখনোই প্রশ্ন করেননি কী করছি, কেনো করছি, টাকা কতো!

চ্যানেল আইয়ের কাছে প্রত্যাশা:
বিশ বছরতো অনেক লম্বা সময়। প্রায় একটা প্রজন্ম বড় হয়ে উঠেছে চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে। ব্যাপারটা ভাবতেই অন্যরকম লাগে। এই বিশ বছরে চ্যানেল আইয়ে অনেক রকম অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছে। চ্যানেলটি অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, অনেক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশ, আমাদের সময় সবকিছুর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে চ্যানেল আই। বিশ বছর পরে এসে যদি সামগ্রিক ভাবে বাংলাদেশের টেলিভিশন, সিনেমা, টেলিভিশনে প্রচার হওয়া টেলিফিল্ম বা নাটক অন্য কোনো মৌলিক অনুষ্ঠান নিয়ে বলতে চাই তাহলে আমি একটা কথাই বলতে পারি, এখন একটা চ্যালেঞ্জের সামনে আমরা আছি। সেটা হচ্ছে দর্শকের মনযোগটা টেলিভিশনে ধরে রাখা। কারণ দর্শকের মনযোগটা এখন নানা দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। মোবাইল আছে,ফেসবুক আছে, ইউটিউব আছে।

‘পিঁপড়াবিদ্যা’সহ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর বেশকিছু আলোটিত ছবির নির্মাতা ফারুকী

অনেকে নিজেরা কন্টেন্ট বানাচ্ছেন, নিজেরা কন্টেন্ট ব্রডকাস্ট করছেন। অন্যের ব্রডকাস্ট করা কন্টেন্ট দেখছে, ফলে মনযোগ এখন নানান দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থাটা টেলিভিশন চ্যানেল গুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমি বিশ্বাস করি, চ্যানেল আইয়ের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা রয়েছে। তার জন্য ভালো কন্টেন্ট নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। ভালো কন্টেন্ট নির্মাণের দিকে নজর দিতে হবে, একইসঙ্গে কী করে বিজ্ঞাপন বিরতির চাপটা কমিয়ে দর্শকদের আরাম দেয়া যায়, কীভাবে বিজ্ঞাপনের ব্যাপ্তী কমিয়ে দর্শককে কন্টেন্টটা দেখানো যায়, প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন বিরতি না করে প্রোডাকশনের ভেতরে বিজ্ঞাপন ব্র‌্যান্ড ঢুকিয়ে দেয়া যায় এরকমটা ভাবতে হবে।