শনিবার রাত। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে হাজার হাজার দর্শক। মধ্য পৌষের কোয়াশাচ্ছন্ন শীত ছুঁয়ে যাচ্ছে সবাইকে। আর পশ্চিমাকাশে সুবিশাল এক ফ্লাড লাইট হয়ে ঝুলে থাকা এক মস্ত বড় চাঁদ। পণ্ডিত চৌরাসিয়ার দিনে যেন চাঁদটি আনন্দে হাসছে।
মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। কানায় কানায় পূর্ণ আবাহনী মাঠে সবাই অপেক্ষা করছেন পণ্ডিত চৌরাসিয়ার জন্য। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের ষষ্ঠ আসরের আলো ঝলমলে মঞ্চে আসলেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান বংশীবাদক পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। তিনি আসার সঙ্গে সঙ্গে বাঁশির জাদুকরকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানালো উপস্থিত দর্শক। তিনিও কথার বাঁধনে বাঁধলেন আবাহনী মাঠের সুর পিপাসু দর্শকদের। পরিষ্কার বাংলায় বললেন, “ আমি পুরো বছর অপেক্ষা করি এখানে আসার জন্য। সারা বিশ্বে এরকম আয়োজন নেই।”
এরপর ঠিক রাত ৪ টায় জাদুর বাঁশিতে সুর তুলেলেন চৌরাসিয়া। মুহূর্তেই পিনপতন নীরবতা নেমে এল দর্শক সারিতে! তবে সবার খেয়ালী কান সজাগ রইল ঐ বাঁশির সুরে!
চৌরাসিয়ার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন, বাঁশিতে বিবেক সোনার ও ইউকা নাগাহ, তবলায় পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, ভবানী শঙ্কর এবং তানপুরায় মুশফিকুল ইসলাম।
একটু পর পরই দর্শককে উজ্জীবিত করেছে তবলার তালের সঙ্গে বাঁশির সুরের ছন্দমাখা প্রেম! আবার কখনো কখনো দর্শকের মনে করুন আবেশ দিয়েছে তানপুরা আর বাঁশির মেলবন্ধন। বাঁশির সুরের নিমগ্নতায় দর্শক যেন ছিল তন্দ্রাচ্ছন্ন। এভাবেই চলল টানা এক ঘন্টা!
ভোর ৫ টা ৩ মিনিটে চৌরাসিয়া একটু থামলেন। ভরাট গলায় বললেন, “ একটা পাহাড়ি বাজাতে চাই? বাজাবো? ” দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ায় তিনি আবার বাঁশিতে সুর তুললেন। সে সুরে যেন আবার নতুন প্রাণ পেল দর্শক। অবশেষে বাঁশির সুর থামলো ভোর ৫ টা ২০ মিনিটে। মঞ্চের সবগুলো আলো জ্বলে উঠলো। তবে ৮০ মিনিটের তন্দ্রাচ্ছন্ন বাঁশিতে মুগ্ধ দর্শক তাদের হৃদয় নিংড়ানো ভাল লাগার বহিঃপ্রকাশ ঘটাল পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার প্রতি মুহূর্মুহূ করতালি দিয়ে।
ছবি : তানভীর আশিক