ছোট ছোট বাইশটি গল্প নিয়ে এই সংকলন। এক একটি গল্পের কলেবর নয়শ’ থেকে পনেরোশ’ শব্দ। যেনো বা পথচলতি দু’জন মানুষ একদণ্ড দাঁড়িয়ে জীবনের কোনো একটি মুহূর্ত একে অন্যকে জানিয়ে যাচ্ছেন।
লেখক সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করেছেন। জয়তীর প্রকাশনায় ‘চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ’ বইয়ে গল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচন ও কাহিনীর বিন্যাসে তার ছাপ পড়েছে। ছোট ছোট গল্পে তুলে ধরেছেন সমাজের সঙ্গতি অসঙ্গতির টুকরো টুকরো ছবি।
সাংবাদিকতায় ফিচার লেখার ক্ষেত্রে যেমন একটি আবেগকে কেন্দ্রীয় আবেগ হিসেবে ধরা হয় এবং বাকি ঘটনা, আবেগ সবকিছু সেই কেন্দ্রীয় আবেগের চারপাশে ঘুরতে থাকে, গল্পগুলোতে সেরকমই একটি কেন্দ্রীয় আবেগকে অন্যসব ছাপিয়ে দৃশ্যমান করার চেষ্টা দেখা যায়।
টুকরো টুকরো গল্পে সমাজের নানা বাস্তবতাকে তিনি তুলে ধরেছেন সাবলীল বর্ণনায়। ‘বিষাক্ততার বিশ্বায়ন’ গল্পে উঠে এসেছে কীভাবে সন্ত্রাসবাদ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ার পিছনে বিশ্বের মোড়লরাও ভূমিকা রেখেছেন।
‘সার্ভিস চার্জ’ গল্পে দেখা গেছে, সাধারণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা টাকা কীভাবে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালীরা নিজেদের পকেটে নিয়ে নিচ্ছে। দুর্নীতির এক ভয়াল চিত্র ফুটে উঠেছে ‘উদ্যত ফনা’ গল্পে।
‘বিপ্রতীপ’ গল্পে রয়েছে একজন মানুষের একই সাথে অসৎ ব্যবসা আর সেই টাকায় সমাজে সংস্কৃতিমান মানুষ হিসেবে পরিচিতির গল্প। ‘ভাবমূর্তি’ গল্পে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যের সাথে বেঈমানির প্রসঙ্গ।
‘গুপ্তধন’ গল্পটি আসলে গুপ্তধন পাওয়ার খবরের আড়ালে গুপ্ত উৎস থেকে প্রাপ্ত ধন লুকানোর গল্প। ‘পার্কের ভালুক’ গল্পে রয়েছে পার্কে ভালুক সেজে কাজ করতে করতে ভালুকের কিছু আচরণে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া একজন মানুষের কথা।
‘চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ’, ‘ঘূর্ণিজলে আর এক পাক’, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘তবু সে দেখিল কোন ভূত’ ইত্যাদি গল্পে রয়েছে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা। মানুষ তার নিজেকে পেছনে ফেলে চলতে পারে না। প্রতিটি পদক্ষেপে ‘নতুন আমি’র সাথে চলতে থাকে ‘পুরোনো আমি’ও।
ফেলে আসা সময়, ফেলে আসা মানুষ, কিংবা ফেলে আসা সম্পর্ককে খোঁজার চেষ্টা আসলে সেই ‘পুরোনো আমি’কেই খোঁজার চেষ্টা। হারিয়ে ফেলা বন্ধুকে যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে প্রযুক্তির আড়াল থেকে এখন বলে ফেলা কথা আসলে হারিয়ে ফেলা দিনে ফিরে গিয়ে বলা কথা। নিজের হারানো দিনে ফেরার চেষ্টা।
কারণ, অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতে মানুষের জীবন সীমাবদ্ধ থাকলেও তার মনের ব্যপ্তি এসব গণ্ডিকে ছাড়িয়ে। কল্পনার সেই আকাশে উড়ে একবারে অনাবিষ্কৃত কোন ‘আমি’কে পাওয়ার স্বাদ নেয় মানুষ। যদিও সে জানে সে আকাশ অতীতে ছিলো না, বর্তমানে নেই, ভবিষ্যতেও আসবে না। তবু তো এলো- স্বপ্নে। বইয়ের কিছু গল্প পাঠককে বাস্তবতার সীমানা ছাড়িয়ে সেই জগতে নিয়ে যায়।
লেখকের গদ্য কাব্যময়, মেদহীন, সুখপাঠ্য। এক একটি গল্পে খুব অল্প সময়ের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে ক্ষুদ্র কলেবরে একটিমাত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে, যা গল্পগুলোতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। এ বিষয়টি পাঠককে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়।
মেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে ‘জয়তী’-র স্টলে। স্টল নম্বর ৪৫৮-৪৬০; সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মূল্য ২০০ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শতাব্দী জাহিদ।