মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে অাসার সময় বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে রোহিঙ্গা বোঝাই একটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে শিশু আরাফাত (৮ ), রোমানা (৭), জুবায়ের এবং হাসানসহ আরও কয়েকজন।
দুর্ঘটনার পর এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু এবং বৃদ্ধ। রোববার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্টের গোলারচর নামক স্থানে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় শিকার এই নৌকায় থাকা আরাফাত জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার কাছে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জানায়, এই দুর্ঘটনায় আমি পরিবারের সকলকে হারিয়েছি। আমি জানি না এখন কোথায় যাবো।
এই দুর্ঘটনায় আরাফাত তার বাবা কামাল হোসেন, মা সাহারা খাতুন, বোন জান্নাত আরা এবং ছোট ভাই জিহাদকে হারিয়েছে। একই ঘটনায় আরাফাতের পাশে বসে থাকা আরও দুই শিশু তাদের পরিবারের সবাইকে পানিতে ডুবতে দেখেছে।
শিশু রোমানা জানায়, সে তার মা আয়েশা দুই বোন মিনারা এবং নূর ফাতেমা ও ভাই নূর হাশিম কে ডুৃবে যেতে দেখেছে। আর তার জন্মের পরপর তার বাবা মারা যায়। তার পরিবারের সব সদস্য মারা গেছে। এখন কোথায় যাবে, কী করবে কিছুৃই জানে না তারা।
ঠিক একইভাবে জুবায়ের (৮) হারিয়েছে তার পরিবারের সকলকে। বাবা হাবিবুল্লাহ, মা মরিয়ম খাতুন, দুই বোন ফাতেমা ও তোয়েবা এবং ভাই কাফায়েত উল্লাহকে নৌকাডুবিতে মারা যেতে দেখেছে।
এই দুর্ঘটনায় পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে হাসান, সায়েদ হোসেনসহ আরো অনেকেই। হাসান তার পরিবারের নয়জন সদস্যকে হারিয়েছে। তার মা গুলজার, বাবা জহিদ হাসান, বোন সেনোরা, বোনের স্বামী অাব্দুস সোবহান এবং তাদের তিন সন্তানকে পানিতে ডুবে যেতে দেখেছে। মাত্র ১৮ মাস বয়সের ভাগনিকেও হারিয়েছে সে। আর সায়েদ হোসেন তার স্ত্রী খালেদা বেগম এবং তিন সন্তানকে হারিয়েছেন।
রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার সময় বাংলাদেশি মৎস শিকারিকে মাথাপিছু ২৫ টাকা করে দিতে হয় বলে জানিয়েছে এই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক রোহিঙ্গা। নৌকায় ২০ জন নেয়ার কথা হলেও ৬০ জনের বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দেয় তারা।
সবকিছু হারানো হাসান বলেন, এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্যের উত্তরের ডোংখালির চরে খোলা অাকাশের নিচে অবস্থান করছে। তারা সামরিয়ক ভাবে অবস্থান করে বাংলাদেশে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের সাহায্যে করতে বাংলাদেশের কিছু ট্রলার রয়েছে সেখানে।
রোহিঙ্গা বোঝাই একটি ট্রলার সাগর পাড়ি দিয়ে নাফ নদী হয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ আসার পথে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢেউয়ের তোড়ে নাফ নদীর গোলার চর নামক স্থানে ডুবে যায় বলে জানান টেকনাফস্থ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম খান।
নিহত ১৩ জনের মধ্যে ৭ জন বালক যাদের বয়স ৩ থেকে ১০ বছর এবং চার জন বালিকা তাদের বয়স ২ থেকে ৩ বছর। এছাড়া ৭০ বছর বয়সের একজন বৃদ্ধ এবং ৬০ বছর বয়সের এক বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩ জনের মতো রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। এর আগেও গত ২৮ সেপ্টম্বরের এক নৌকা ডুবিতে প্রাণ হারায় অন্তত ২৩ জন এবং উদ্ধার করা হয় ১৭ জনকে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ৭ অক্টবর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে তাদের মধ্যে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮ শত জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।