বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীন ১০ বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশে ফাইবার অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক খাতে ১৩ বছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করবে তারা। দেশব্যাপি ইউনিয়ন, থানা, এবং গ্রামীণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনের আওতায় আনতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবকাঠামোগত অনুন্নয়ন সত্ত্বেও চীন কেন এই সহায়তা দিবে? এশিয়ান টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশ ভৌগলিক কৌশলগতভাবে ভারতের পূর্বের রাজ্য গুলোর সঙ্গে সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। ভারত-চীনের সম্পর্ক টানাপোড়ানের মাঝে চীন বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তার মাধ্যমে বন্ধুত্ব সম্পর্ক রাখতেই এই বিনিয়োগ। শুধু চীনই একমাত্র দেশ নয়, কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে টোকিও, নয়া দিল্লি এবং ওয়াশিংটন বাংলাদেশকে গুরত্বের সাথে বিবেচনা করছে।
তবে ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ এবং ব্যবহারে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে বা ভালো অবস্থান নেই তা বলার সুযোগ নেই। শুধু গত সপ্তাহে জন প্রতি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে দেশের কাঠামোগত সমস্যার সমাধান শুধু টাকা দিয়ে হবে না। আবার ডুয়িং বিজনেস এর জরিপে বালাদেশের অবস্থান যুদ্ধবিধস্ত আফগানিস্তানের নিচে রয়েছে।
বাংলাদেশ অবকাঠামোগতভাবে তথ্য প্রযুক্তিখাতে বিনিয়োগে এখনোও অপ্রস্তুত। নেই গঠনমূলক তদন্তের পরিবেশ। সরকার ইতোমধ্যে থার্ড জেনারেশন বা থ্রিজি’র জায়গায় ফোর জি বাস্তবায়নে নীতি গ্রহণ করেছে। নতুন এই প্রস্তাবনায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে টাওয়ার শেয়ারিং বন্ধ এবং নিজেদের মধ্যে কেনাবেচার ব্যাপারগুলো বন্ধ করা হবে। কোম্পানিগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকে টাওয়ার কোম্পানির লাইসেন্স পরিমান হ্রাস করা হবে বলে জানানো হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ-চীন-ভারত- মিয়ানমার এর বিশেষ অর্থনৈতিক করিডোরে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার আওতায় বাংলাদেশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চায় ভারত। বেইজিং এর অগ্রগতিকে বাধা দিতে ভারত জাপানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। চীনের সিল্ক রোড মোকাবেলায় জাপানের জাইকার ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় ভারতের মিজোরাম এবং মেঘালয় হয়ে জাতীয় হাইওয়ে নির্মাণ করছে। এই রাস্তা ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সীমান্তসহ বাংলাদেশকে সংযোগ করবে।
বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব লাভের প্রত্যাশায় ব্যবহার করছে। যেটা ঢাকার জন্য খুব দুঃখজনক। বাংলাদেশ অন্যদেশগুলোর কাছে দাবার গুটি। বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলো তাদের আন্তর্জাতিক খেলার বলি বানাতে চায়।
তাদের প্রতিবেদেনে বলা হয়, বাংলাদেশের সামনে এখন সোনাদিয়া দ্বীপের সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করবে। সেখানেও ভারত, জাপান, এবং চীনের বিনিয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ জাহাজের কন্টেইনার নিয়ন্ত্রণ করতে এই সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করতে চাইবে না। তবে বেইজিং এবং টোকিও প্রথম বাংলাদেশকে সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রস্তাব করে। বাংলাদেশের কোন সমুদ্র বন্দর না থাকায় প্রতিদিন ১৫ হাজার ডলার অর্থনৈতিক লোকসানে পরতে হচ্ছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চীনের এই বিনিয়োগ শুধু প্রতিযোগিতার অংশ নয় বরং এটি অন্যদের মোকাবেলা করার হাতিয়ার।