চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে হাজার হাজার লাখ লাখ উইঘুর মুসলিমের ওপর নির্যাতন চালানো এবং নির্বিচারে বন্দী শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে দেশটির বিরুদ্ধে। তবে চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শিবিরে আটকে রাখা হচ্ছে না, তাদেরকে ‘কারিগরী শিক্ষা’ দেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বিবিসির একটি দল জিনজিয়াং প্রদেশ ঘুরে আসে। সেখানে তারা উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে কথা বলে, প্রত্যক্ষ করে তাদের সঙ্গে কী হচ্ছে।
বিবিসি জানায়: ২০১৫ সালে গুগল আর্থে জিনজিয়াংয়ের যে ছবি নেয়া হয়েছিল, তিন বছর পর সেখানে গিয়ে তার বাস্তব চিত্র দেখা যায়। যেগুলোকে বন্দী শিবির বলা হচ্ছে, সেগুলো আসরে উঁচু দেয়ালে ঘেরা এবং ওয়াচ টাওয়ারের সমন্বয়ে গড়া সুরক্ষিত এলাকা।
‘ওই এলাকায় প্রবেশের শুরুতেই ডাবাংচেং এ বাধা দেয় পুলিশ। ক্যামেরা বন্ধ করতে বলে তারা। এখানে কারও সঙ্গে মুক্তভাবে কথা বলারও সুযোগ নেই। এরপরও বিবিসির প্রতিনিধিদল কথা বলেছে কয়েকজনের সঙ্গে।’
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে: উইঘুর জনগোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ নির্যাতন হচ্ছে। কিন্তু চীন তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, জিনজিয়াংয়ে যেগুলোকে বন্দী শিবির বলা হচ্ছে সেগুলো আসলে স্কুল। এসব স্কুলে তাদেরকে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।
সেখানে গিয়ে বিবিসির প্রতিনিধিদল দেখতে পায়, গুগলে ধুলিময় যে চিত্র দেখা গেচে, তা এখন বিলুপ্ত। সেখানে নেয়া হয়েছে নানা ধরনের প্রকল্প। মরুভূমির বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে অনেক ভবন, এদের সবগুলোই চারতলা বিশিষ্ট।
স্থানীয় এক হোটেল মালিক বলেন: এগুলো শিক্ষাকেন্দ্র। একজন দোকানদারও তাই বললেন। এসব স্কুলে হাজার হাজার মানুষ আছে, তাদের চিন্তা-চেতনায় কিছু সমস্যা আছে।
সেখানে বিনা বিচারে মানুষকে বন্দী করে রাখার অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহল করলেও চীন বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম স্বচ্ছ প্রতিবেদন তুলে ধরার চেষ্টা করে। এতে তারা ঝকঝকে শ্রেণিকক্ষ, কৃতজ্ঞ শিক্ষার্থী যারা ক্লাসের নিয়ম মানতে আগ্রহী- এমন চিত্র তুলে ধরছে। তবে শিক্ষার্থীদের যে এসব শিক্ষায় বাধ্য করা হয়েছে তার কোন নমুনা নেই এসব প্রতিবেদনে। এসব শিক্ষা কবে শেষ হবে তার কথাও বলা নেই কোথাও।
বিবিসি জানায়: ২০০২ সালে রেইলা আবুলাইতি নামে এক তরুণী যুক্তরাজ্যে পড়তে যান। নাগনিকত্বের জন্য সেখানে একজন ব্রিটিশকে তিনি বিয়ে করেন। গত বছর তার মা তার সঙ্গে ও তার ছেরের সঙ্গে দেখা করতে যান। তার মা একজন প্রকৌশলী, তিনি চীনের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।
‘তিনি দেশে ফিরলে মেয়ে তাকে ফোন করেন। এরপর তিনি মেয়েকে জানান পুলিশ তাদের বাড়ি তল্লাশি করবে এবং তল্লাশির কারণ তার মেয়ে। পুলিশ মেয়ের বিস্তারিত তথ্য দিতে বাধ্য হন তিনি।
এরপরই মা মেয়েকে বলেন, আমাকে আর কল দিও না। সেটাই ছিল মায়ের শেস কণ্ঠস্বর তার কাছে। তার ধারণা, তার মাকে তখন থেকে কোন শিবিরে রাখা হয়েছে।
মেয়ে বলেন, আমার মাকে কোন কারণ ছাড়াই বন্দী করে রাখা হয়েছে। আমি যতদুর জানি, চীন সরকার উইঘুর পরিচয় দুনিয়া থেকে মুছে ফেলতে চায়।’