চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের স্বেচ্ছারিতামূলক সিদ্ধান্তে স্বপ্ন ভঙ্গ হতে চলেছে ৬৯ জন বেকারের। নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর তিনটি পদে নিয়োগ বাতিল করেছে ‘চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন’। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়লো ওই তিনটি পদে নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা ৬৯ জন প্রার্থীর ভবিষ্যৎ।
গত বুধবার কর্পোরেশনের চিফ অব পার্সোনেল মো. আবুল রফিক সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ বাতিলের এই খবর জানানো হয়। অনিবার্য কারণ দেখিয়ে তারা এ নিয়োগ বাতিল করে।
নিয়োগ বাতিল হওয়া পদগুলো হচ্ছে- সহকারী ব্যবস্থাপক (উৎপাদন), সহকারী ব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ/বীজ পরিদর্শন) এবং সহকারী ব্যবস্থাপক (জেনারেল ক্যাডার)।
তাদের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। কর্পোরেশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করার কথা জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর ১০টি পদে প্রথম শ্রেণির ১০৭টি শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন। পরের বছরের ১৪ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়।
ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০টি পদের মধ্যে প্রথম সাতটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০১৫ সালেই সম্পন্ন করেছে কর্পোরেশন। পাঁচ বছর শেষ হলেও বাকি তিনটি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বাকি এই তিন পদের ৬৯টি প্রথম শ্রেণির ফল ঝুলে ছিলো।
এর মধ্যেই নিয়োগ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কর্পোরেশনের চিফ অব পার্সোনেল মো. আবুল রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। তাদের সচিব এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।
পরে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, মূলত অর্থ সংকটের কারণে এই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আমরা উৎপাদনে যেতে পারছি না, গত তিনমাস যাবত আমাদের মিলগুলোতে বেতন হয় না।
‘‘এছাড়া আমাদের কমিটি হয়েছে অনেক আগে। লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ২০১৪ সালে, ভাইভা নেওয়া হয়েছে ২০১৫ সালে। ইতোমধ্যে আমাদের কমিটির যারা সদস্য, যারা আহ্বায়ক তাদের মধ্যে একজন পরিচালক ইন্তেকাল করেছেন, দুজন পরিচালক অবসর গ্রহণ করেছেন। অন্যান্য আরো কয়েকজন অবসর গ্রহণ করেছেন।’’
তিনি বলেন: প্রথম কারণ, আর্থিক অবস্থা, দ্বিতীয় হলো এটা আমরা দীর্ঘদিন দিতে পারিনি। সামগ্রিকভাবে বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আমরা নিয়োগ বাতিল করেছি। আমাদের চিনির দাম কম, চিনি বিক্রি করতে পারছি না, সবকিছু মিলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমরা নিয়োগ দিতে পারছি না।
তবে আর্থিক সংকটের কথা বলা হলেও আবারো জনবল নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
চাকরিপ্রার্থীরা জানান, ‘নিয়োগপ্রার্থীদের দাবির মুখে দফায় দফায় ফলাফল প্রকাশের তারিখ দেওয়া হলেও তা প্রকাশ করেননি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৫ মার্চ চিনি শিল্প ভবন ঘেরাও ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন নিয়োগপ্রার্থীরা।
পরিস্থিতি শান্ত করতে কর্পোরশেনের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ আমাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জানানো হয়, ২০ মার্চের মধ্যে নিয়োগ সম্পর্কিত সব কার্যক্রম শেষ করা হবে। কিন্তু এরপরও নির্ধারিত দিন ফলাফল প্রকাশ করেনি কর্পোরেশন।’
এসময় দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পোস্টারিং করেন আন্দোলনকারীরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
তবে এই অভিযোগের বিষয়ে কর্পোরেশনের চিফ অব পার্সোনেল মো. আবুল রফিক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা দেয়া হলেও তিনি কোন জবাব দেননি।
ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীদের একজন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘আমার চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই চাকরির জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্ত সবকিছু এলোমেলো করে দিল। এখন আমার ভবিষ্যত অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো, সেই সঙ্গে স্বপ্ন ভঙ্গ হলো আমার বাবা-মায়ের।’
তবে এখনো আশা ছাড়েননি এই চাকরিপ্রার্থীরা। কর্পোরেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করবেন বলে জানান তাদের অনেকে। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং নাতিও রয়েছেন।
তারা বলেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে বিভিন্ন দপ্তরে শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে কর্পোরেশনের এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্যের শামিল।