বিগত কয়েক মাস ধরে রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে চিকুনগুনিয়া। এই রোগে আক্রান্তরা জ্বর, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ও র্যাশ ওঠার মতো সমস্যায় ভুগে। জ্বর ছেড়ে গেলেও ব্যথা থাকে অনেকদিন, শরীরের কর্মক্ষমতাও কম থাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। শুরু থেকেই চিকিৎসকরা বলছেন, এডিস মশার বিস্তারের কারণে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এই মশা নিধন যাদের দায়িত্ব সেই সিটি কর্পোরেশন কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজেদের ব্যর্থতার দায় একে অপরের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে! অতিষ্ট হয়ে মশা নিধনে ব্যর্থতার অভিযোগে শনিবার বিকেলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রকে লাল কার্ড দেখানোর কর্মসূচী পালন করেছেন লেখক-শিল্পী-ছাত্র-শিক্ষক ও ঢাকার নাগরিকরা। এছাড়া শনিবার দুপুরে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের দাবিতে অভিনব এক মশারি মিছিলও হয়েছে। মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের দাবিতে মশারি নিয়ে ঢাকা মহানগরের দক্ষিণ অংশ পরিভ্রমণ করেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। দুই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা মশা মারতে দুই মেয়রের গাফিলতির বিষয়ে অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগের তীর যাদের দিকে সেই মেয়ররা বলছেন ভিন্ন কথা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যখন বলছে সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতির কারণে এই রোগের বিস্তার ঘটছে, তখন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলেছেন, চিকুনগুনিয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশন দায়ী নয়। এমনকি সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সিটি মেয়র বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে মশা মারা তাদের দ্বারা সম্ভব নয়! অথচ নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, মশক নিধন তার কাজের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে এ বিষয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি তার বক্তব্যের জন্য জনগণের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক বলেই মনে করি। কেননা অন্যান্য রাজনীতিবিদের মতো কোন বিষয়ে ভুল বলেও তার ওপর অটল না থেকে জনগণের কাছে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তবে সিটি মেয়ররা শুরু থেকে এসব কাজে তাদের সীমাবদ্ধতা এবং সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার অভিযোগও করে আসছেন। তাদের এসব অভিজ্ঞতার বিষয় আমলে নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয়হীনতা দূর করে তাদের সীমাবদ্ধতা কমাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জনদুর্ভোগ কমাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায় এড়ানোর মানসিকতার বদলে তাদেরকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে আমরা আহ্বান জানাই।