গাছপালা, প্রাণী এবং মানবদেহের শরীরবৃত্তীয় শৃঙ্খল কিভাবে পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে এই রহস্যের উদঘাটন করার স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞানের নোবেল পেয়েছেন তিন আমেরিকান বিজ্ঞানী জেফরি সি হল, মাইকেল রোসব্যাশ এবং মাইকেল ডব্লিউ ইয়াং।
তারা দেখিয়েছেন জীবদেহের আণবিক ক্রিয়াকলাপ পদ্ধতি সার্কাডিয়ান ছন্দ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাদের এই আবিষ্কারকে ‘চব্বিশ ঘন্টার দেহঘড়ি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোবেল কমিটির এক ঘোষণায় বলা হয়, প্রাণী দেহে একটি সাইকেল ক্লক বা ঘড়ি চালু রয়েছে, যা পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও সৌর জগতের বিবর্তনের সঙ্গে প্রাণীদেহকে মানিয়ে নিতে সহায়তা করে।
এমন ধারণা অনেক আগের হলেও এত দিন পর্যন্ত এ বিষয়ে তেমন কোনো অকাট্য দলিল কেউ দেখাতে পারেননি। জেফরি সি হল, মাইকেল রোসব্যাশ ও মাইকেল ডব্লিউ ইয়ং এই প্রমাণটিই করে দেখিয়েছেন।
একই সঙ্গে শরীর বৃত্তীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই দেহঘড়ির প্রভাবের বিষয়টিও তারা বের করেছেন। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে এ আবিষ্কারকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতির ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং আহ্নিক গতি পৃথিবীর জীবজগতকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। প্রাণীর অভিযোজন থেকে শুরু করে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হরমন নিঃসরণ খাদ্য পরিপাক, ঘুমসহ বিভিন্ন বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ করে এই শক্তি।
ঠিক একইভাবে প্রাণীর শরীরের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি জৈবিক ছন্দ বা দেহঘড়ি যা সার্কিডিয়ান রিদম নামে পরিচিত। মূলত বর্হিজগতের সঙ্গে প্রাণী দেহের সামঞ্জস্য তৈরি করার জটিল কাজটি করে থাকে এই সার্কিডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ি।
মৌমাছির উপর কাজ করে এই তিন বিজ্ঞানী দেখতে পান যে, এর শরীরে বিশেষ এক ধরনের জিন রয়েছে। যার কারণে রাতের বেলায় মৌমাছির শরীরে বিশেষ এক ধরনে প্রোটিন জমাট বাঁধে, রাতের বেলায় তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। এই ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে, যা বাইরের জগত সময়ের ধারণার মতো একটি নিজস্ব সময়ের বৃত্ত তৈরি করে।
পুরস্কারের নগদ অর্থের ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা বা ১১ লাখ মার্কিন ডলার ডলারের দুই ভাগের একভাগ পাবেন জেফরি সি হল এবং মাইকেল রোসবাশ। বাকি ভাগ যাবে মাইকেল ডব্লিউ ইয়াংয়ের পকেটে।
প্রতিবছর সবার আগে চিকিৎসার নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ১৯০৫ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত চিকিৎসা ক্ষেত্রে ১০৮বার নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে চিকিৎসায় নোবেল জিতেছিলেন জাপানের নাগরিক ইয়োশিনোরি ওহসুমি।
হলের জন্ম নিউইয়র্কে এবং রোসবাশের জন্ম কানসাস শহরে। তারা দুজনেই ব্রানডেইজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। মাইকেল ইয়াংয়ের জন্ম হয়েছে মায়ামিতে এবং তিনি রকেফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান।