ভারতের ঝাড়খন্ডের একজন দরিদ্র দিনমজুর বাবা ধর্ষণের শিকার হওয়া তার নয় বছর বয়সী কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই চার কিলোমিটার দূরের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। দুই মাস আগে পাশবিক নির্যাতনের শিকার গুরুতর আহত মেয়েটির বাবার এই দীর্ঘ পথ অতিক্রমের জন্য একটি সাইকেল কেনারও সামর্থ্য নেই।
গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে একজন গাড়িচালক চকলেট দেওয়ার কথা বলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে ক্ষতবিক্ষত দেহটি পার্শ্ববর্তী একটি নদীর পাশে ফেলে রেখে যায়। প্রচুর রক্তপাতের ফলে দাঁড়াতে বা হাঁটাতে অক্ষম মেয়েটি হামাগুড়ি দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে তার বাসায় পৌঁছে। এই পাশবিক নির্যাতনের কথা তার অভিভাবককে জানায়।
মেয়েটিকে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী জামশেদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও ডাক্তাররা রক্তপাত বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে রাচি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। সেখানে সফল সার্জারির পর রক্তপাত বন্ধ হলে বাড়ি ফিরে আসে মেয়েটি। এখন বাসায়ই নিয়মিত মেয়েটির ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হয়।
“আমার সাইকেল বা মোটরবাইক নেই তো কি হয়েছে? সে আমার বাচ্চা, আমি তাকে ফেলে দিতে পারি না। যতদ্রুত সম্ভব আমি তার নিরাময় চাই বলেই প্রতিদিন তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়।” ঝাড়খন্ড প্রদেশের রাজধানী রাচি থেকে ২০০ কিলোমিটার পূর্বের হাতিয়াপাতা গ্রামের বাসিন্দা ওই বাবা এমন করেই বলেন তার কথা।
মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাটিতে কোনো গণপরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় হেঁটেই চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবাকে। প্রখর রোদ বা বৃষ্টি যাই হোক না কেনো ডাক্তারের একটি সাক্ষাতও বাদ দেন না তিনি।
দীর্ঘমেয়াদে মেয়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে নিয়মিতভাবে কাজ করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে দরিদ্র পরিবারটিকে। কিন্তু কন্যাকে সুস্থ করে তুলতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাবা। অসুস্থ মেয়েকে খুশী রাখার জন্য নতুন জামা এবং উপহার কিনে দিতে গৃহপালিত পশুদেরও বিক্রি করে দিয়েছে পরিবারটি।
আর্থিক দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মেয়ের চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দেই বলে কাজে যেতে পারি না। আমাদের সঞ্চিত যতো অর্থ ছিলো তার সবই নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমরা এখন ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি।
দিনমজুর বাবা আরো বলেন, খোদাই জানে আরো কতদিন আমাদের এমন দূর্ভোগ পোহাতে হয়। আমি চাই একজন ডাক্তার বাসায় এসে যদি মেয়েটির ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে দিতো, কিন্তু তা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো।
অন্য আরো একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর নির্যাতনের শিকার মেয়েটি ধর্ষককে চিহ্নিত করতে পেরেছে।
ঘাটসিলা সাব-ডিভিশনাল অফিসার বি পি সিং বলেন, আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েটির ধর্ষণ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে অবগত রয়েছি। মেয়েটির দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য যা করা দরকার আমি করবো।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস