সহকর্মীদের ‘অভিযোগের’ পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ঘটনার ১৩০ দিন পার হলেও এ বিষয়ে কোন তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি বা ঘটনার কারণ সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন ছুটিতে থাকা ওই অধ্যাপক।
বৃহস্পতিবার তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: কোন ধরনের কারণ না দেখিয়ে আমাকে চার মাস ধরে কর্মস্থল থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে যে আমি কোন অপরাধ করেছি, তাহলে তারা সে বিষয়টির তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। কিন্তু তা না করে তারা আমাকে বেকার বসিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন: তারা আমাকে বেতন দিয়ে বসিয়ে রাখছে। এতে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হচ্ছে। বিভাগের কিছু অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাকে সারা জীবন এভাবে রাখা হবে। এভাবে চলতে পারে না, বিষয়টির সুরাহা হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়াধীন। তাই এ নিয়ে কোনো রকম মন্তব্য করাটা সমীচীন হবে না বলে মনে করছি। তবে একটি ঘটনার কারণটি আমি বলতে পারি, অর্থনীতি বিভাগের সকল শিক্ষক সম্মিলিতভাবে তৎকালীন উপাচার্যের কাছে তার (অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী) বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ জানায় যে তার সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন: এটি ছিল বিভাগের সকল শিক্ষকের সম্মিলিত প্রয়াস। বিভাগের কোন শিক্ষক এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন না। এরপরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে এবং তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এখন তাকে কারণ দেখানো হয়েছে কি হয়নি কিংবা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে কি না সে বিষয়ে আমরা কিছুই বলতে পারবো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এনামুজ্জামান বলেন: বিষয়টি নিয়ে যেহেতু উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছিলো তাই এ নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। আর এরকম অনেক বিষয় নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়। সুনির্দিষ্ট কারও বিষয়ে কোন তথ্য জানতে হলে রেজিস্ট্রার অফিসে এসে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তথ্য দিয়ে থাকি।
এর আগে ২০১২ সালে বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে বিবাহবর্হিভূত সম্পর্ক থাকার অভিযোগে অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। সেসময় তার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তও হয়েছিল। কিন্তু পরে তাকে শর্ত সাপেক্ষ বিভাগীয় কর্মকাণ্ডে ফেরার সুযোগ দেওয়া হয়।
বিভাগের শিক্ষকরা জানান, এর আগেও গত ১২ জুলাই সিন্ডিকেটের এক সভায় রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। ১৩ জুলাই রেজিস্ট্রারের সাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০ জুলাই হাইকোর্ট রিট করেন রুশাদ ফরিদী। এর ওপর ২৩ ও ২৪ জুলাই শুনানি করে আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন), সহ-উপাচার্য (শিক্ষা), রেজিস্ট্রার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসনকে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেয়।
কিন্তু এখনও সেই রুলের জবাব বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে রিট আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: রুশাদ ফরিদীকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি নয় এ বিষয়ের কোন জবাব এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে দাখিল করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে কাজটি করেছে তা পুরোপুরি বেআইনি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোন জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে কোন শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলে তার এখতিয়ার শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দেয়া হয়েছে। সিন্ডিকেট তা করতে পারে না। আর তাও তিন মাস বা ৯০ দিনের বেশি নয়। এর মধ্যে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এ এফ এম মেসবাহউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
যেই সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয় সেই সভায় উপস্থিত এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ওই শিক্ষক ফেইসবুকের মাধ্যমে তার সহকর্মীদেরকে গালিগালাজ করেছেন বলে অভিযোগ এসেছিল। এ কারণে একই বিভাগের ৩১ জন শিক্ষক অভিযোগ দিয়ে বলেছিলেন, শিক্ষকসুলভ আচরণের পরিপন্থী কাজ করার কারণে তার সঙ্গে কাজ করা সম্ভব না। এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত করতেই সিন্ডিকেট তখন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।