চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘চার বছরে বদলে যাবে দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো’

চট্টগ্রাম থেকে: দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেট কমপ্লেক্স সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পথে হাঁটছে অন্য ভেন্যুগুলোও। বন্দরনগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে নতুন অবকাঠামো তৈরির কাজ। পুরোপুরি সিলেটের মতো না হলেও চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে যু্ক্ত করা হবে একাডেমি ভবন, উন্নত জিমনেশিয়াম, অনুশীলনের জন্য মাঠ ও বাড়তি উইকেট। কক্সবাজার স্টেডিয়ামে নতুন স্থাপনা তৈরি ও পূর্বাচলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম নির্মানের কাজও শুরু হবে শিগগিরই।

চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বিসিবি পরিচালক ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আনাম জানালেন ভেন্যু নিয়ে মহাপরিকল্পনার কথা। যা বাস্তবায়ন হলে অনেকটাই ঘুঁচে যাবে ভেন্যু সংকট। চাপ কমবে মিরপুরের ওপর।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

প্রশ্ন: নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন অবকাঠামোগত উন্নয়নে এবার বেশি কাজ করা হবে। গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাই কোন মডেলে কাজ হচ্ছে?
মাহবুবুল আনাম: আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম একটি একটি করে সব ভেন্যুকে উন্নত করার। সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর। আমরা সিলেটকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ধরে এগিয়েছি। সিলেট সম্পন্ন হয়েছে। এখন আমরা চট্টগ্রামে করছি। ইনডোরের কাজ প্রায় শেষ। তার সঙ্গে একটা একাডেমি বিল্ডিং ও আউটার গ্রাউন্ড হবে। দশটি নতুন উইকেট করা হচ্ছে স্টেডিয়ামের বাইরে। প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ বেশি দরকার, শুধু মাঠ থাকলেই তো হয় না। এই মৌসুমের মধ্যে চট্টগ্রাম ভেন্যু কমপ্লেক্স হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। ক্রিকেট মৌসুম শেষ হলে মে মাস থেকে আমরা রাজশাহী এবং খুলনায় কাজ শুরু করবো।

প্রশ্ন: অবকাঠামোগত সুবিধা কীভাবে ব্যবহার করা হবে?
মাহবুবুল আনাম: এটা করার কারণ হলো প্রত্যেকটা বিভাগে আমরা একটা করে একাডেমি তৈরির চিন্তা করছি। একইসময়ে যদি বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল যদি ক্যাম্প করতে চায় তাহলে বিভিন্ন ভেন্যুতে আমরা তাদেরকে পাঠাতে পারি। এছাড়াও আঞ্চলিক একাডেমি করার যে পরিকল্পনা আছে সেটি এই ভেন্যুগুলোতে থাকতে পারবে। যারা ম্যাচ খেলবে তাদের যদি আমরা ফাইন টিউন না করি তাহলে তো উন্নতি হবে না। যেটা খুবই খুবই প্রয়োজনীয়। আমরা দেখি কিছু কিছু খেলোয়াড় হারিয়ে যায়, আসলে তারা হারায় না। ‘ল্যাক অব কনফিন্ডেন্স’ এ ভোগে। তখন তাদেরকে নিয়ে আলাদা কাজ করাতে হয়। সেজন্য প্রতিটি অঞ্চলে একটা করে একাডেমি খুবই প্রয়োজন। একাডেমি হলেই তো শুধু হবে না, প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ লাগবে, ইনডোর-আউটডোর সুবিধা লাগবে। সে জিনিসগুলোই আমরা একবারে তৈরি করছি। সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থার মাধ্যমে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে একাডেমি ভবনের নকশার ডিজাইন করা হয়েছে। সিডিএ (চট্টগ্রাম ডেভলপেমেন্ট অথরিটি) এটার সঙ্গে যুুক্ত থাকবে।

প্রশ্ন: কবে নাগাদ সব কাজ শেষ হতে পারে?
মাহবুবুল আনাম: আমরা শুধু বাইরেই উইকেট করছি না। স্টেডিয়ামের সেন্টারেও আমরা উইকেটের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। চট্টগ্রামে সেন্টারে আরও দুটি উইকেট হবে। ঘরোয়া যে খেলাগুলো হয় সেখানে মাঠের একটা অভাব থাকে, সেজন্য প্রত্যেকটা মাঠে অ্যাডিশনাল উইকেট হবে। এটা একটা ধাপ। আশা করছি আগামী ৩ বছরের মধ্যে আমাদের মেজর ফার্স্ট ক্লাস ভেন্যুগুলোকে নতুন রূপ দিতে পারব। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা ঢাকার বাইরে থাকলে নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন করতে পারে না। কোভিড পরিস্থিতির কারণে আমাদের ভালো একটা অভিজ্ঞতা হলো, প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ আমাদের সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রয়োজন। যে কোনো পরিস্থিতিতে যেন খেলোয়াড়রা আদর্শ অনুশীলনের সুবিধা পায়। এটা হচ্ছে আমাদের মূল লক্ষ্য।

প্রশ্ন: এসব কাজ শেষ হলে তো ২০৩১ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
মাহবুবুল আনাম: শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম ও কক্সবাজার আশা করছি চার বছরের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। এটি হয়ে যাবে বিসিবির এই মেয়াদের মধ্যে। কক্সবাজার ভেন্যুর কাজ অগ্রসর হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাধ্যমে। সামনের চার বছরে বদলে যাবে দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো।

প্রশ্ন: বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম নিয়ে কী ভাবনা, সেখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ কি আছে?
মাহবুবুল আনাম: বগুড়াকে কাজে লাগাবো আমরা। সেখানকার উইকেট খুব ভালো। খুবই লাইভলি উইকেট। সেখানে যে মাটি আমরা ব্যবহার করেছি কোয়ালিটি খুবই ভালো ছিল। একটা জিনিস বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশে সবসময় সবধরণের মাটি পাওয়া যায় না। আমরা মাটি নিয়ে কিন্তু ল্যাবে পরীক্ষা করি। মাটির ওপর নির্ভর করে, উইকেট কীভাবে বানাব। বগুড়ার উইকেট খুবই প্রানবন্ত, জীবন্ত। ওটাকে আমরা ব্যবহার করব যাতে অনুশীলনটা ভালো হয়। আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মানদন্ড যেটি ছিল তাতে একটু পরিবর্তন এসেছে, তা হলো আবাসন। মাঠটা কিন্তু খেলার জন্য অনুমোদিত ছিল। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ানডে হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ম্যাচও হয়েছে। তো এখন আন্তর্জাতিক ভেন্যুর যে মানদন্ড (উন্নত আবাসন) আছে তা যদি পূরণ করতে পারি তাহলে এই ভেন্যুকে আমরা আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে আবার দেখতে পাব।

প্রশ্ন: খুলনা, রাজশাহীতে নতুন কি কি যুক্ত হবে?
মাহবুবুল আনাম: প্রাথমিকভাবে আমাদের লাগবে আউটডোর প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ। যেখানে অনেকগুলো উইকেট থাকবে। প্রচুর প্র্যাকটিস করা যাবে। স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে মাঠ থাকা উচিত যেখানে ক্যাচিং, ফিল্ডিং অন্যান্য প্র্যাকটিস করা যাবে একইসঙ্গে। একটা জিমনেশিয়াম, একটা ইনডোর লাগবে। এগুলো হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক চাওয়া এবং এগুলোর সাথে আঞ্চলিক একাডেমিগুলো প্রস্তুত করার লক্ষ্য আমাদের। আমরা চেষ্টা করব ওই স্টেডিয়াম সংলগ্ন জায়গাতেই এই প্র্যাকটিস সুবিধা দিতে।    যদি জায়গা সংকুলান না থাকে, জানেন যে বিসিবি কিছু জমি ক্রয় করতে যাচ্ছে মাঠের জন্য। সেখানে হবে। ভেন্যুর সঙ্গে পাওয়া গেলে সবচেয়ে ভালো।

প্রশ্ন: হোম অব ক্রিকেটে মিরপুরে সব কিছুই আছে। শুধু উইকেটে রান নেই। বিপিএলের প্রথম পর্বে ছোট রানের ম্যাচই হয়েছে বেশি। উইকেট কেন টি-টুয়েন্টির প্রত্যাশা মেটাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে, করণীয় কী?
মাহবুবুল আনাম: মিরপুরে ম্যাচের চাপ যত কম হবে, ঢাকার বাইরে যত বেশি খেলা হবে তত ভালো। বছরে ৬০ দিনের বেশি যদি ম্যাচের জন্য ব্যবহার করি তাহলে মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। অতিরিক্ত ম্যাচ ছাড়াও জাতীয় দল কিন্তু মিরপুরের সেন্টার উইকেটে অনুশীলন করে, ব্যক্তিগত অনুশীলনও অনেকে করে। এটার জন্য প্রচুর পরিমানে চাপ পড়ে। এই চাপটা যদি আমরা বাইরে নিতে না পারি তাহলে খুবই কঠিন হবে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের জন্য। অন্য দেশের দিকে তাকালে দেখবেন, যে কোনো আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে বছরে ৬০ দিনের বেশি খেলা হয় না।