কারবালার শোককে স্মরণ করে মঙ্গলবার রাজধানীতে তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করেছেন। এ বছর তাজিয়া মিছিল সাজানো হয় ইমাম হোসেন (রা.) এর সমাধির আদলে।
পাশাপাশি ছিল কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি। বিবি ফাতেমার স্মরণে মিছিলের শুরুতেই দুটি কালো গম্বুজ বহন করা হয়। মিছিলের অংশগ্রহণকারী হাজারো মানুষ বিভিন্ন নিশান বহন করেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর পুরান ঢাকার হোসেনী দালান থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু হয়। তাজিয়া মিছিল সমন্বয়ের মূল দায়িত্ব পালন করেন হোসেনী দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটি।
কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত নিজের দেহে ছুরি বা ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতাম করে থাকেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধে এবার ছুরি দিয়ে মাতম করা হয়নি। তবে গায়ে রঙ লাগিয়ে কারাবালার সেই রক্তপাতের দৃশ্য তুলে ধরা হয়।
মিছিলে দুইটি ঘোড়ার মধ্যে একটিতে লাল রঙ দিয়ে রক্তের রূপ দেওয়া হয়। ইমাম হোসেন যখন কারবালায় যান, তখন ঘোড়ার চেহারা এক রকম ছিল, আবার যুদ্ধ শেষের সেই রক্তাক্ত ঘোড়াকে তুলে ধরা হয়। সবকিছু মিলিয়ে কারবালার রক্তাক্ত প্রন্তরকে ফুটিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন অনুসঙ্গ দিয়ে।
হোসেনী দালান ইমামবাড়ি থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়ে বকশীবাজার রোড, নিউ মার্কেট হয়ে ধানমণ্ডি লেকের ‘কারবালা’ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
হোসেনী দালানের চারপাশেই রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বেস্টনী। পোশাকধারী র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
তাজিয়া মিছিল শুরুর পর মিছিলের সামনে ও পেছনে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তা পাহারা দেয়। যে সড়ক দিয়ে মিছিল গেছে, পুরো রাস্তা ঘিরে নিরাপত্তা বেস্টনী গড়ে তোলা হয়। রাস্তার পাশের ভবনগুলোর রুফটপ থেকে পুলিশ সদস্যদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়।
রাজধানীর পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা, পুরানা পল্টন, মগবাজার, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও মিরপুর ১১ নম্বরে বিহারি ক্যাম্পগুলোয় আশুরার পালিত হয়। এসব এলাকাগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে ডিএমপি।
আশুরার তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন আগে থেকেই নিষিদ্ধ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হোসেনী দালানের দায়িত্বরত একজন মুরাদ হাসনাইন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাজিয়া মিছিলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদেরও পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়।
হিজরি সালের ১০ মহররম কারবালার প্রাঙ্গনে হজরত মুহাম্মদ (সা.)- এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর দিনটি মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন হিসেবে আশুরা পালিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত হচ্ছে।